ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। কারণ, ক্রমবর্ধমান দস্যুতার মাধ্যমে ভূমি, নদী, খাল, জলাশয় দখল করা হয়েছে। সরকারের চোখের সামনে এসব করা হয়েছে। অন্যদিকে নগরায়ন ও শিল্পায়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করাকে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী ও বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গোষ্ঠী ওই আগ্রাসনে লাভবান ও সুরক্ষাকারী।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত টিআইবি কার্যালয়ে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ইউনেস্কো (ঢাকা অফিস ও রিজিওনাল অফিস-নিউ দিল্লী), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং আর্টিকেল নাইনটিন-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আর্টিকেল নাইনটিন-এর আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম সঞ্চালনা করেন।

আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ও অফিস প্রধান সুজান ভাইজ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্নয়নের নামে পরিবেশ বিনষ্টের ঘটনাকে স্বাভাবিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ২০২২-২৪ পরিবেশ দূষণ প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে ২৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার জেরে ৪৩ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ২০১৬ সালে কয়লা প্রজেক্টে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হওয়ার ঘটেছিল। যাদের জমি দখল হয়েছে, সে ধরনের লোক প্রতিবাদ করে নিহত হয়েছেন। এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে স্বাভাবিকতার কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পরিবেশকর্মীর ওপর আগ্রাসী আক্রমণ হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে। একটি আগ্রাসী মহল থেকে জমি, ভূমি, জলাশয় দখল করা হচ্ছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জলাশয় দখল করে ট্রেনিং সেন্টার করার উদাহরণ রয়েছে। এটা স্থানীয় পর্যায়ে বেশি দেখা যায়। মিডিয়া সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে মিলেমিশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। এমনকি আন্তর্জাতিক যোগসাজশও হতে দেখেছি।

সুজান ভাইজ বলেন, নির্ভরযোগ্য তথ্যই নয়, পেছনের ঘটনা বুঝতে হবে এবং রিচেক একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমকর্মীর জন্য। কীভাবে পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করতে পারি, সেটা বিবেচ্য। আমরা লজিস্টিক ও গবেষণাধর্মী সহযোগিতা করতে পারি। এক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন হতে পারে। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ডায়ালগ হতে পারে।

অন্যদিকে অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, একাডেমি, পরিবেশ বিজ্ঞানী ও গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে একটি ডায়ালগ হতে পারে। যা গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্মকে শক্তিশালী করবে। স্থানীয় পর্যায়ে থেকে মিডিয়ার পরিবেশ নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

সাংবাদিকতা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও চ্যালেঞ্জিং। সাংবাদিকরা বিপদে পড়লে কেউ পাশে থাকে না। শুধু লাইসেন্স দিয়ে সরকারকে বসে থাকলে চলবে না, মনিটরিং করতে হবে। এজন্য একটা সংস্থা তৈরি করতে হবে। টেলিভিশনের জন্য সম্প্রচার কমিশন গঠন করার দাবি জানান ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজাউল হক রাজা।

আরএম/এসকেডি