চিকিৎসক নন, তারপরও ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতেন মিল্টন
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার নিবন্ধিত চিকিৎসক নন। তারপরও আশ্রমে আশ্রয় নেওয়াদের চিকিৎসা দিতেন তিনি। এছাড়া আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে কেউ যদি মারা যেতেন তাহলে নিজেই ডাক্তার সেজে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করতেন মিল্টন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২ মে) রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল পাশা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
বিজ্ঞাপন
এজাহারে তিনি অভিযোগ করে বলেন, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এসব সংবাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগের একটি দল গতকাল সন্ধ্যায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন
পুলিশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার জানান, তিনি কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নন এবং তার প্রতিষ্ঠানেও নিবন্ধিত কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজে ডাক্তার সেজে সেখানে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। এছাড়া এজাহারনামীয় পলাতক আসামি কিশোর বালার (২৬) সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা এবং সেবা দিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতেন। এসব কনটেন্ট ফেসবুক, হোয়াটসআপ ও ইমোর মাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড ফলোয়ারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করতেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, গতকাল চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের অভিযানে সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্রসহ ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এছাড়া সেখানে দুটি স্ট্যাম্প সিল পাওয়া যায়। যার মধ্যে একটিতে ইংরেজিতে লিখা ছিল এমডি মুহিদ খান ও অন্যটিতে বাংলায় লিখা মিল্টন সমাদ্দার। ডেথ সার্টিফিকেটগুলোতে নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর করতেন মিল্টন সমাদ্দার। ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের কাছে মৃত্যুসনদ প্রদান করতেন মিল্টন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, মিল্টন দীর্ঘ দিন ধরে মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক ও শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মিল্টন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদান না করে খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে তাদের মৃত্যু ঘটিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন।
রিমান্ডে মিল্টনের কাছে যেসব তথ্য জানতে চাইবে পুলিশ
ডিবি সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহিন ব্যক্তি, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের নামে সঠিক দায়িত্ব পালন না করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া মৃতদের সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য মিল্টনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি। এ ৫০ ব্যক্তির মৃত্যুর সঠিক কারণ ও জাল সনদ তৈরির পেছনে মিল্টনের অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কি না তা জানতে চাইবে ডিবি। এছাড়া তার সঙ্গে এসব প্রতারণায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না তাও জানতে চাইবে ডিবি পুলিশ। পাশাপাশি আশ্রমে আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে কাউকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা এবং তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছেন কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
এমএসি/এসকেডি