বিকেল তখন সাড়ে চারটা। চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় কড়া রোদে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিকশাচালক আনিছুর রহমান। যাত্রী হয়ে দুই নম্বর গেইট থেকে চকবাজার যাওয়ার কথা বলেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক। ৪০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ হলো। এরপর রিকশার প্যাডেল ঘুরবার সঙ্গে বাড়তে থাকে আলাপ। দীর্ঘ আলাপে সহজ সরল আনিছুর জানালেন জীবনের দুঃখগাঁথা।

চট্টগ্রামের বায়েজিদ টেক্সটাইলের চৌধুরীনগর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন আনিছুর রহমান। জানালেন তার বয়স ৩৭-৩৯ বছর। যদিও তাকে দেখে যে কেউ দেখে বলবে তার বয়স ৫০ বছর ছাড়িয়ে গেছে। বয়সের চেয়ে শরীরের এমন ভঙ্গুরভাব হওয়ার পিছনে হাড়ভাঙা পরিশ্রমকে কারণ হিসেবে দেখছেন আনিছুর। ১ মে মহান মে দিবস নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সকাল থেকে বের হই রিকশা নিয়ে। রাত হলে বাসায় যাই। ভাড়া মারলে পেট চলে। এই দিবস নিয়ে পড়ে থাকলে তো ভাত জুটবে না।’

নিজের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৫ জনের সংসার। সারা দিন রিকশা চালিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই। মালিককে রিকশা ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। মাসে ঘর ভাড়া দিতে ৬ হাজার টাকা। আর বাজারে সব জিনিসের অবস্থা তো ধরার মতো না। নিজের বাচ্চাদেরও ঠিকমতো পড়াশোনা করাতে পারি না।’

শারীরিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন আনিছুর রহমান। একটু পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমাকে সবাই বলে ৫০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে। কাউকে ৩৭ বছর বললে বিশ্বাস করে না। সারা দিন রিকশা চালাই। একটু ভালো খাবার খেতে পারি না। তাই হয়তো শরীরটা বেশি ভেঙে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে আসছি ৮ বছর। আগে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে ছিলাম। দিনাজপুরে ১২ বছর বয়স থেকে ক্ষেতে কাজ করা ও গরু-ছাগল পালন করেছি। রাত দিন এক করে কাজ করতে হয়েছে। সেখানে এক বছর কামলা দিয়ে ১২’শ টাকা পেতাম। এখনও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।’ 

আরএমএন/পিএইচ