· দ্রুত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি

· সরকারের মধ্যেই এর পক্ষে জোয়ার উঠেছে

১৯৯৭ সালে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ২৭ থেকে ৩০ করার হয়। ওই সময় বাংলাদেশে গড় আয়ু ছিল ৫৭। ৩৩ বছরের ব্যবধানে এখন গড় আয়ু ৭৩ বছর। কিন্তু চাকরিতে আবেদনের বয়স সেইটা রয়ে গেছে। তাই বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা নিরিখে দ্রুত চাকরিতে আবেদনের সময় কমপক্ষে ৩৫ করার দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রার্থীরা।

বুধবার (১ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসা সংগঠন ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ী ভাবে বৃদ্ধি চাই’ মুখপাত্র শরিফুল হাসান শুভ। এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়স, বাংলাদেশে বাস্তবতাসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।  

শরিফুল হাসান শুভ বলেন, সরকার এক সময় এ আন্দোলনকে কোনো পাত্তা না দিলেও ধারাবাহিক আন্দোলন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সচিব ও রাজনৈতিক নেতাদের বাস্তবতা বুঝানোর পর সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে তারা। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাস্তবতার নিরিখে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর জন্য আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সরকারের এসব কর্মকাণ্ড আমাদের আন্দোলনে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছি। 

তাই দ্রুত সময়ের সময়ের চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

শুভ জানান, শিক্ষামন্ত্রীর ডিও, নির্বাচনী ইশতেহার ছাড়াও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চন্নু সংসদে এ দাবির পক্ষে জোর সুপারিশ করেছেন। এছাড়া ৩২ জন সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীতিগত সমর্থন করে জোর সুপারিশ করেছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনও এই দাবিকে পক্ষে সুপারিশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যপাত্র শুভ বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করছি। ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু ৭৩ বছর। সে হিসেবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। এছাড়া ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (কর্মক্ষমহীন জনসংখ্যার চেয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার আধিক্য) যথাযথ সুফল পাওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা। ভারত ও চীনসহ উন্নত বিশ্ব এই স্ট্রাটেজিই অনুসরণ করে সফল হয়েছে। 

চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর অন্যতম যুক্তি হিসেবে শুভ বলেন, করোনা মহামারির সময় প্রায় আড়াই বছর তেমন কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। এরপর প্রতি সপ্তাহান্তে ১০ থেকে ১৫টি পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যায় ফলে পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজস্র চাকরি প্রত্যাশী। করোনাকালীন যাদের বয়স ২৭-২৯ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক। ফলে চাকরি প্রার্থীরা বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে সাতাশ বছর পেয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ৩৯ মাসের ব্যাকডেট ধরে একটি বয়স ছাড় দেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাকডেট কার্যকর ছিল ১৩ মাস, বাকি ২৬ মাস তা অকার্যকর অবস্থায় ছিল।

শুভ বলেন, বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর, তার মধ্যে কিছু দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যভেদে চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। ভারতসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো অনেক গবেষণা করেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে ন্যূনতম ৩৫ বছর করেছে। বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত যুব সমাজকে মানবসম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে সেটি হবে যুগোপযোগী ও যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কয়েক ধাপ অগ্রসর হওয়া যাবে।

ভারতসহ বিশ্বের সব উন্নত রাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করেই বেকারত্ব কমিয়েছে এবং মেধা রপ্তানি করে রেমিটেন্স বাড়িয়েছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ করে রাখার কারণে দেশে দক্ষ জনবল, গবেষক গড়ে উঠছে না এবং বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। আমাদের উচিত উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করা।

বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩৫ বছর (বিসিএস, ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর, পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে খাদিজা খাতুন মুক্তাসহ বিভিন্ন স্তরের আন্দোলনকারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমএম/এনএম/কেএইচ/এসএম