জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের নানান প্রতিকূলতা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে। যার প্রতিরোধে বা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে জাতিগতভাবে নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তনের বিষয়টিও ঘটতে পারে।

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রচার অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

মূলত, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব শীর্ষক গবেষণায় গুরুতর দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, মানসিক বৈকল্য এবং ঘুম না হওয়ার মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে৷ সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সি৩ইআর), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফর্মের যৌথ গবেষণায় প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই গবেষণার জরিপে মানসিক স্বাস্থ্যব্যাধির একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জরিপকৃতদের মধ্যে উদ্বেগ জনিত সমস্যায় ভুগছেন ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, বিষণ্নতায় ভুগছেন ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মানসিক চাপে আছেন ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ, দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ভালো ঘুম হয় না ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ মানুষের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমেরিটাস অধ্যাপক  ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। এটা ভালো যে, এই প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি ভালো স্টাডি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের আরও প্রভাব জানতে এখন আমাদের জরিপ চালানো পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।

একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গবেষণা অনুদান বাড়িয়ে ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি করার প্রস্তাবনাও শিগগিরই পাস করা হবে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের (এনআইএমএইচ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সমন্বয়মূলক প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের ব্যক্তিত্বের নানান সমস্যা দেখা যায়। তবে এসব গবেষণা পরিচালনা করার সময় গবেষকদের কিংবা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরও মতামত ও পরামর্শ নেওয়ার বিষয়টিও আরো গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।

এ সময় টেলিমেডিসিনের গুরুত্ব তুলে ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ডা. ড্যানিয়েল নোভাক। 

গবেষণা পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাও গবেষণায় উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, সেবাদানকারীদের পেশাদারিত্বের ঘাটতি, সীমিত অর্থ সামাজিক সহায়তা, ওষুধের ঘাটতি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপ্রতুলতা এবং নাগালের বাইরে বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা। শ্যামনগরের মানুষজন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে জীবনযাত্রায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানানো হয়েছে।

আরএইচটি/এনএফ