ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে দাবদাহ। তপ্ত রোদ আর প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেও জীবিকার তাগিদে অনেকে বের হয়েছেন পথে। তীব্র এই গরমে তাদের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। অনেকে পথেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তারপরও থেমে থাকার সুযোগ নেই, পেটের দায় তাদের টেনে নামাচ্ছে পথে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে রিকশা চালক, ভ্যান চালক ও ভাসমান দোকানিদের গরমে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাজধানীর কয়েকজন শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেটের দায়ে উত্তপ্ত আবহাওয়ায়ও তাদের রাস্তায় বের হতে হচ্ছে। করতে হচ্ছে সীমাহীন কষ্ট। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাদের কষ্টের পরিমাণ এই গরমের কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরপর জিরিয়ে ও শরবত খেয়েও শান্তি পাচ্ছেন না তারা। অনেকে গরমে না টিকতে পেরে বাসায় ফিরে যান। যারা কষ্ট করে রাস্তায় রয়েছেন তাদের গরম থেকে বাঁচতে নানা উপায় অবলম্বন করতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর হাতিরঝিল, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উত্তপ্ত রোদে শ্রমজীবীরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে তাদের সারা শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। শরীরের ঘাম মুছে তারা আবারও কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সুযোগ বুঝে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন।

রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিচ্ছেন রিকশাচালক জামাল হোসেন। সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন তিনি। গরম কাটাতে একটু আগে ফুটপাতের দোকান থেকে এক গ্লাস শরবত কিনে খান তিনি। 

জামাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ৭ গ্লাস শরবত খাইছি। প্রতি গ্লাসের দাম ১০ টাকা। এছাড়া কলা রুটি ও স্যালাইন খাইছি। গরমের কারণে এখন প্রতিদিন ১০০-১২০ টাকা বেশি খরচ হয়। আগে ৪০-৫০ টাকায় দিনের খরচ হয়ে যেত। বাংলামোটর থেকে নিউমার্কেট খ্যাপ নিয়ে আসছি। এখন মনে হচ্ছে শরীর আর চলতেছে না। এভাবে গরম চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাব।

মো. সালাউদ্দিনের বাসা রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায়। সকাল ১০টায় তিনি রিকশা নিয়ে বের হন। গরমে টিকতে না পেরে ৩ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বর এলাকায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, সকালে গাড়ি নিয়ে বের হইছি। কয়েকটা খ্যাপ মেরেছি মাত্র। এর মধ্যে গরমের কারণে কয়েক গ্লাস শরবত খাইছি। এই গরমে আর টিকতে পারছি না, প্যাডেল মারার শক্তি নাই। রোদে চামড়া পুইড়া যাইতাছে, তাই বাসায় যাইগা।

রাজধানীর বাংলামোটরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে নিজের রিকশায় বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন মো. লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, এই গরমে গাড়ি লইয়া বাইর হইয়া কোনো ফায়দা নাই। একদিকে গরমে শরীরের চামড়া পুড়ে যায়। অন্যদিকে যেই টাকা আয় হয় তা দিয়া শরবত খাইতে খাইতেই শেষ। এত গরম জীবনে আর কখনো দেখি নাই। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহরে রিকশা চালাইতে পারব না। এই গরমে রিকশার প্যাডেল মারতে জীবনটা বাইর হইয়া যায়।

এমএসি/এমএ