তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে গোটা দেশ। প্রচণ্ড রোদ-গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। ঘরে-বাইরে কোথাও মিলছে না শান্তি। দফায় দফায় জারি হচ্ছে ‘হিট অ্যালার্ট’। আবহাওয়ার এ বিরূপ আচরণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যেসব কারণকে চিহ্নিত করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া বা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন।  

আবহাওয়ার এই রুদ্ররূপ দেখে আলোচনায় আসছে গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। সামাজিক যোগাযোগসহ অন্যান্য নানা মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে বৃক্ষরোপণ অভিযানের। ১০ দিনে ৫ লাখের বেশি চারা রোপণের টার্গেট নিয়েছে সরকারি দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

দাবদাহের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে এভাবে এখনই অনেকে বৃক্ষরোপণ অভিযানে নেমে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও বাস্তবতা হলো এখন গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জুন-জুলাই মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় বা বর্ষাকাল হচ্ছে গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এই সময়ে আলো-বাতাস এবং বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে বলে মাটিতে রস থাকে। ফলে চারাও সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে। 

তাই এখন বৃক্ষরোপণের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গ্রীষ্মেই রোপন করা চারাগুলো ভবিষ্যতে তাপমাত্রা কমাতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এই চারাগুলো নিজেরাই টিকে থাকতে পারবে তো?

৫ লাখ বৃক্ষরোপণের যে টার্গেট ছাত্রলীগ নিয়েছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী ও অন্যান্য সাংগঠনিক ইউনিট নিজ উদ্যোগে চারারোপণ করছে। এই কর্মসূচি পালনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করতে হবে, কৃষি বিশেষজ্ঞ ও সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহযোগিতা নিয়ে উপযুক্ত স্থানে নিয়মমাফিক চারা রোপণ করবে, শুষ্ক মৌসুম বিধায় নিয়মিত গাছে পানি দিতে হবে, রোপণ করা চারার পরিচর্যা করতে হবে, প্রতিটি উপজেলা ইউনিট এক হাজার এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিট পাঁচশ চারা রোপণ করবে, চারা রোপণের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং চারা রোপণের ছবি, ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেকোনো সংকট সমাধানের জন্য প্রতিবছর নিয়মিতভাবে ছাত্রলীগ চারা রোপণ কর্মসূচি পালন করে। পরিবেশ দিবস-২০২৪-কে সামনে রেখে (৫ জুন) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এক কোটি চারা রোপণ করে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানোর পরিকল্পনা করছে। আর চলমান বৃক্ষরোপণ অভিযানের পর নিয়মিত যত্ন নেওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বশীলরা বলছেন, গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে এই রুক্ষ মৌসুমে রোপণ করা অধিকাংশ বৃক্ষই বাঁচানো সম্ভব হবে না। কারণ বর্তমানে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মাটি শুকিয়ে রস শূন্য হয়ে গেছে। এমনকি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। তাই যেসব গাছ লাগানো হচ্ছে সেগুলোতে নিয়মিত প্রচুর পানি দিতে না পারলে তার কোনোটিই বাঁচবে না। সেজন্য এই মৌসুমে যদি বৃক্ষরোপণ করা হয় তাহলে পর্যাপ্ত যত্নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এর কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। ব্যাপক আকারে বৃক্ষরোপণ করতে হলে বর্ষাকালকেই বেছে নেওয়া উচিত।   

তাপমাত্রা-জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন রোধ করতে বেশি বেশি গাছ লাগানোর পাশাপাশি গাছ কাটা বন্ধের বিকল্প দেখছেন না পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে নয় বরং সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে বর্ষাকালে সারা দেশে ব্যাপক গাছ লাগাতে হবে। একইসাথে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে গাছ কাটার ক্ষেত্রে।

বৃক্ষরোপণের সুফল পেতে সময় লাগবে ৫-১০ বছর 
এই গরম থেকে বাঁচতে বারবার বৃক্ষরোপণের কথা বলা হলেও এমন নয় যে এর ফল কালই পাওয়া যাবে। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে এর সুফল পাওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টিকে দীর্ঘমেয়াদি এবং বিস্তৃত কার্যক্রম হিসেবে মন্তব্য করেছেন ঢাকা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. বাহাদুর হোসেন ভূঞা। 

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বৃক্ষরোপণ করলে তাকে (চারা গাছকে) পরিচর্যা করে বাঁচানোও খুব কঠিন হয়ে যাবে। কারণ অত্যধিক তাপমাত্রা এবং রস শূন্য মাটিতে চারাগুলোর জন্য টিকে থাকা কঠিন হবে। সেজন্য আমরা বলি, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। কারণ, চারা গাছের বেঁচে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন। আবার রোপণ করার সাথে সাথেই সে সার্ভাইভ করবে (বেঁচে থাকবে) এমনটি কল্পনাও করা যায় না।

তিনি বলেন, গাছ লাগানোর বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। কোটি কোটি গাছ একসাথে রোপণ করলেও তার সুফল সাথে সাথে পাওয়া যাবে না। কমপক্ষে ৫-১০ বছর সময় দিতে হবে। তবে নতুন গাছ লাগানোকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি না। কিন্তু এখন গাছ লাগালে টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এর পাশাপাশি নতুন করে যেন কোনো গাছ কাটা না হয় সেদিকে আরও বেশি দৃষ্টি দিতে হবে।

তাপপ্রবাহের মতো পরিবেশজনিত সমস্যা রোধে দীর্ঘমেয়াদি আর কী ধরনের কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক বাহাদুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই বনভূমি এবং জলাধারের পরিমাণ কমেছে। বাংলাদেশে এখন সুন্দরবন, পার্বত্য এলাকা, মধুপুর এবং ভাওয়াল ছাড়া উল্লেখযোগ্য বনভূমি নেই বললেই চলে। এ কারণেই পরিবেশ রক্ষার্থে ভবিষ্যতে যেন আর বনভূমি নষ্ট না হয় সেটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, ঢাকায় আরও বেশি সবুজ, পর্যাপ্ত জলাধার এবং প্রবহমান পানির উৎস থাকলে তাপমাত্রা আরও সহনীয় পর্যায়ে থাকতো।

ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ 
এমন তাপমাত্রার সাথে সচরাচর পরিচিত নয় বাংলাদেশের মানুষজন। সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ নাতিশীতোষ্ণ বা হালকা গরমের সাথে অভ্যস্ত। এতটা দীর্ঘ সময়ের তাপপ্রবাহ অনেকের কাছেই অপরিচিত। তাই এখনই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুমন্ডণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার তাপমাত্রা অনেক বেড়েছে। যেখানে ২০১৭ সালেও গ্রীষ্মকালে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রির নিচে ছিল, সেটি এখন ৩৮ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাতাস সঞ্চালন না হওয়া, সবুজ নিধন হওয়ার ফলে প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তীব্র তাপবাহ থেকে বাঁচতে হলে যেসব ফ্যাক্টর দরকার আমরা সেসব কে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছি। জলাধার এবং সবুজের উপস্থিতি সাধারণত কোনো এলাকাকে শীতল রাখে। কিন্তু আমাদের শহরের আয়তন অনুযায়ী সেই পরিমাণ জলাধার ও সবুজ নেই। অপরিকল্পিত বিল্ডিং গড়ে ওঠার কারণে বায়ুপ্রবাহ ঠিক নেই। এসব ঠিক থাকলে আমাদের তাপমাত্রা কিছুটা সহনশীল হতো।

গত সাত বছরে ঢাকায় গড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রির বেশি
গত ৭ বছরে রাজধানীতে গড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রির বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে ২০১৭ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৩৯ ২০২৪ সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ৩৭.৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। ক্যাপসের একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।  

ক্যাপসের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সময়ে ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতিঝিল এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ২০২৪ সালে এসে দেখা গেছে মতিঝিল এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩৯.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। অর্থাৎ গত ৭ বছরের ব্যবধানে এই এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩.৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে রাজধানীর অন্যতম জনবহুল এলাকা গুলিস্তানে ২০১৭ সালে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২৪ সালে এসে দেখা গেছে গুলিস্তানের বর্তমান তাপমাত্রা ৪০.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ধানমন্ডি এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩২.৫০ ডিগ্রি, ২০২৪  সালে এই এলাকায় তাপমাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে ৫.৫৪ ডিগ্রি।

গত ৭ বছরে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম বেড়েছে মহাখালীতে। এই এলাকায় ২০১৭ সালে গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ৪১.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অর্থাৎ গত ৭ বছরের ব্যবধানে মহাখালীতে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে তেজগাঁও, মিরপুর ১০, ফার্মগেট এলাকায় গত ৭ বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৩ ডিগ্রির বেশি।

গাছ লাগানোর চেয়ে নিধন বন্ধ করা জরুরি 
বর্তমান পরিস্থিতিতে গাছ লাগানোর চেয়ে নিধন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বা প্রতিক্রিয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটি বিজ্ঞানীরা অনেক আগে বলেছেন। আপনি দেখুন দুবাইয়ের মতো মরু জায়গায় অতি বৃষ্টির ফলে বন্যা হয়েছে। যা একেবারেই অবিশ্বাস্য। এরপরও যদি আমরা জলবায়ু পরিবর্তন কাকে বলে এবং এর অভিঘাতগুলো কী কী হওয়া প্রয়োজন সেটা বুঝতে না পারি, তা খুবই দুঃখজনক। আরও দুঃখজনক হচ্ছে আমাদের নীতিনির্ধারক অর্থাৎ দেশ ও সমাজ যারা পরিচালনা করেন তারা এসব বিশ্বাস করেন না। নতুন গাছ লাগানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ গাছ কর্তন রোধ করা। কিন্তু এখন বিভিন্ন জায়গায় বনভূমি উজাড় করে  মিল-ইন্ডাস্ট্রিকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। কাজেই আগে গাছ নিধন বন্ধ করে তারপর গাছ লাগাতে হবে।

বর্তমান সময় গাছ লাগানোর জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়
বর্তমান তাপপ্রবাহের সময়টি বৃক্ষরোপণের জন্য উপযুক্ত নয় বলে মনে করছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। 

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বর্তমান সময় গাছ লাগানোর জন্য মোটেও উপযুক্ত সময় না। কারণ গাছ লাগালে মাটিতে রস থাকতে হয়। এখন চারাগাছ মাটিতে সে রস পাবে না। তবে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য অনেক গাছ থাকা দরকার। কিন্তু সেটি নির্ধারিত সময়েই লাগানো উচিত। আমরা জানি, গাছ লাগাতে হবে বর্ষাকালে। কেননা তখন মাটিতে রস থাকে। বৃক্ষরোপণ অভিযানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই গাছ লাগিয়ে মানুষজন চলে আসে। যার যত্ন পরবর্তীতে নেওয়া হয় না। এজন্য বর্ষাকালেই গাছ রোপণ করাটা যুক্তি সংগত এবং ভালো।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সরকারের অনেক বড় বড় প্রজেক্ট রয়েছে। তবে জলবায়ু বিষয়টি একদিনের নয়। এটি একটি লম্বা সময়ের ব্যাপার। বিষয়টি নিয়ে সরকারের যে সমন্বিত উদ্যোগ থাকা দরকার ছিল সেটি নেই। আবার এই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য সরকারিভাবে যে সকল উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সেটিও চোখে পড়েনি।

বর্তমান এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সমন্বিত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসাইন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বর্তমান তাপপ্রবাহ নিয়ে আমাদের খুব বেশি কিছু করার নেই। এখন সতর্ক থাকতে হবে। 

আর গাছ রোপণ করার যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি সময়সাপেক্ষ। কারণ আজ গাছ লাগালে বড় হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এটি রাতারাতি সমাধান করার সুযোগ নেই। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, যেসব এলাকায় সবুজ রয়েছে কিংবা যাদের বাড়ি খোলামেলা তারা কিন্তু অন্যদের তুলনায় ভালো আছেন। আর বাকি মানুষজন এখন ইমোশনালি অনেকেই মনে করছে গাছ লাগালে হয়তো এমন পরিবেশ কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গাছ লাগালেও সহনীয় পরিবেশ তৈরি হতে সময় লাগবে।

তিনি বলেন, আর শহরে গাছ লাগানোর জায়গা কোথায়? গ্রামে চাইলেই এখনো ব্যাপক আকারে বৃক্ষরোপণ করা সম্ভব। কিন্তু শহরে এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা করে সামনের দিনগুলোতে কী কার্যক্রম হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। না হলে আমাদের এনার্জি সেক্টরের উপর অনেক বেশি চাপ পড়বে। কারণ এই গরমে মানুষজন না খেয়ে এসি কেনার চেষ্টা করছে। যখন ঘরে ঘরে এসির ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে তখন বিদ্যুৎসহ এনাজি খাতে স্পষ্ট চাপ পড়বে।

তা ছাড়া এ বিষয়গুলোতে বিভিন্ন সরকারের পাশাপাশি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং ছাত্র সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. ফারুক হোসাইন।

আরএইচটি/এনএফ