বৈশাখের গরমে অতিষ্ঠ নগরজীবন। প্রকৃতি পুড়ছে দাবদাহে। এলোমেলো হয়ে পড়েছে নগরজীবন। হাঁপিয়ে উঠেছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। অসহনীয় গরমে বিবর্ণ প্রাণ-প্রকৃতি।

এ অবস্থার মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না ওয়াসার পানি। এই দাবদাহের মধ্যে পানি না পেয়ে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ।

রাজধানীর বাড্ডা, নতুন বাজার, রামপুরা, মেরুল, ডিআইটি, মালিবাগ, বাসাবো, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পুরান ঢাকা, মুগদা, মান্ডা, লালবাগ, রায়েরবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েকদিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। সেসব জায়গায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আবার কিছু এলাকায় ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপ কম থাকায় সেখানেও পানির সংকট তৈরি হয়েছে।

লাইনে পানি না পেয়ে যারা টাকার বিনিময়ে ওয়াসার গাড়ির পানি অর্ডার করছেন তারাও ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

ঢাকা ওয়াসার আওতায় ১০টি মডস জোনে বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে পানি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এক্ষেত্রে প্রতি ছয় হাজার লিটারের একটি বড় গাড়ির জন্য নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি থাকায় সিরিয়াল দিয়ে বা ফোন করেও এসব পানির গাড়ি পাচ্ছেন না অনেকে। ৬০০ টাকার গাড়ির জন্য ১০০০ বা ১২০০ টাকা দিয়েও সিরিয়াল পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ভাড়া বাসায় থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী বশির আহমেদ। তিনি গত ৪-৫ দিন ধরে বাসায় পানি পাচ্ছেন না। ক্ষোভ প্রকাশ করে বশির আহমেদ বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে ওয়াসার লাইনে পানি পাচ্ছি না আমরা। এত গরমে মানুষের জীবন যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে বাসায় পানি না থাকা যে কতটা কষ্টের তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝেন। এই ৪-৫ দিন গোসল নেই ঠিকমতো, শৌচাগার ব্যবহারও কঠিন হয়ে পড়েছে। পানি ছাড়া তো এই গরমে এক মুহূর্তও থাকা সম্ভব নয়। এত সমস্যা, কিন্তু ওয়াসার কোনো উদ্যোগ নেই।

একই এলাকার পাঁচতলা একটি বাড়ির মালিক রিয়াজুল ইসলাম। তিনি একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এই দাবদাহের মধ্যে পানি না থাকায় আমরা নিজেরা এবং ভাড়াটিয়ারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমরা ওয়াসার মডস জোনে বারবার যোগাযোগ করছি। তারা বলছে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার অর্ডার দিয়েও আমরা পানি পাচ্ছি না। রাতে এক গাড়ি করে পানি কিনে দিনে একবার ভাড়াটিয়াদের সরবরাহ করছি।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা আক্কাস মিয়াও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, রান্না, গোসল, বাথরুমের জন্য পানি পাচ্ছি না। খাওয়ার পানি বাইরে থেকে কিনে আনছি। এই গরমে খুবই দুর্বিষহ অবস্থা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করেও ‍কোনো সুফল পাচ্ছি না আমরা।

মডস জোনের আওতায় বাড্ডার বৌবাজার এলাকার ওয়াসার পাম্পের অপারেটর মনিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে পানি সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মেশিন চালিয়ে ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে কিছু কিছু এলাকায়। গরমে পানির চাহিদাও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। সেখানে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার দাবি, চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে তাদের। শীতকালে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার থেকে ২৪০ কোটি লিটার। গরমকাল এলে এটা বেড়ে ২৬০ কোটি লিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। ওয়াসার সক্ষমতা রয়েছে ২৯০ কোটি লিটার উৎপাদনের। তারা এখন দেনিক ২৬০ কোটি লিটার উৎপাদন করছে।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনো ছুঁতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মোট উৎপাদনের ৩৫ শতাংশ। বাকি ৬৫ শতাংশ পানি তারা তুলছে ভূগর্ভ থেকে।

এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসার সব মডস জোনের কার্যক্রম তদারকির জন্য ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীতে পানির সমস্যা সমাধানে এসব টিম জুলাই মাস পর্যন্ত কার্যক্রম মনিটরিং করবে। এসব টিম জোনভিত্তিক পাম্পগুলো নিয়মিত ও আকস্মিক পরিদর্শন করবে। পাম্প চালকরা যথানিয়মে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে টিমগুলো। পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করবে এ টিম।

এএসএস/এসএসএইচ