এসির দোকানে ছুটছে মানুষ, কেউ কিনছেন, কেউ ঘুরছেন
তাপপ্রবাহে পুড়ছে পুরো দেশ। অত্যধিক গরম আর রোদের তাপে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। অবস্থা এমন যে, ঘরের মধ্যে কিংবা ছায়াযুক্ত স্থানেও মিলছে না স্বস্তি। বৈদ্যুতিক পাখার নিচ থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরলেও শরীরে ঘাম তৈরি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে সবুজের সমাহারে প্রাকৃতিক বাতাসে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ভিন্ন অবস্থা রাজধানীবাসীর।
সবজায়গায় অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে সৃষ্ট গরম এবং পরিবেশে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে সময় পার করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। আবার বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসেও মিলছে না শান্তি। এমন অবস্থায় স্বস্তির জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এসি) কেনার ধুম পড়েছে। এবছরের গরমে পুরো রাজধানীজুড়েই এসির বাজার চাঙ্গা। প্রতিদিনই বিভিন্ন কোম্পানির শোরুম, প্রদর্শনী কেন্দ্র এবং মার্কেটের বড়-ছোট দোকানে এসি কেনার জন্য ভিড় করছেন মানুষ।
বিজ্ঞাপন
তারা বলছেন, একসময় এসি বিলাসী পণ্য হিসেবে গণ্য করা হলেও এবারের গরমে এই ধারনা কর্পুরের মতো উবে গেছে। গরম আবহাওয়ায় বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসও গরম লাগে। তাই বাধ্য হয়েই এসি কেনার চিন্তা করতে হচ্ছে। আবার যারা বহুতল ভবনের উপরের তলায় থাকেন কিংবা যাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে তারা পড়েছেন আরো বেশি বিপাকে। প্রচণ্ড গরম এবং অত্যধিক তাপমাত্রায় স্বস্তির জন্য বাধ্য হয়েই এসি কিনছেন। অনেককেই দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে কোন ব্র্যান্ডের এসি কিনলে ভালো হবে সে বিষয়ে জানতে চাইছেন।
বিক্রেতারাও বলছেন, প্রতিবছর গরম এলে এমনিতেই এসির বিক্রি বাড়ে। তবে এবছর অত্যধিক গরম পড়ার কারণে গত কয়েকদিন ধরে এসির বিক্রি তুলনামূলকভাবে অন্য যেকোনো সময় এবং যেকোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। আর নতুন কেনা এসব এসি অধিকাংশই ঢাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে লাগানো হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশব্যাপী হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এ সময়ে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মোংলায় ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুর জেলায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকা, টাঙ্গাইল জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.২ ও ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ভ্যাপসা গরমের কারণে অস্বস্তির পরিমাণও ছিল বেশি। তাই সাধ্যের মধ্যে এসি কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শনী কেন্দ্র এবং দোকানগুলোতে।
বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যেসব ব্র্যান্ডের এসি
দেশের বাজারে অনেক ধরনের ব্র্যান্ড এবং নন-ব্র্যান্ডের এসি পাওয়া যায়। এরমধ্যে গ্রি, এ্যাসকোয়ার, জেনারেল, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ট্রান্সকম, মিডিয়া, শার্প, ভিশন, সিঙ্গার, স্যামসাং, এলজি, হিটাচি, মিনিস্টার এবং ওয়ালটন এসি উল্লেখযোগ্য।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায় এখানকার প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। এর অধিকাংশই একেবারেই নতুন ক্রেতা। আর ক্রেতা টানতে বিশেষ ডিসকাউন্ট, স্ক্যাচ কার্ড অফার এবং ইন্সটলেশন ফ্রি করে দিয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
বিক্রেতারা জানান, এখানে ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসি আছে। তবে এরমধ্যে ইনভার্টার এসির চাহিদা বেশি। কারণ ইনভার্টার এসিতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
গ্রির একটি একটনের নন-ইনভার্টার এসির দাম ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা, ইনভার্টার এসি ৬৯ হাজার ৯৯০ টাকা, এলজির দেড় টন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা, ২ টনের এসি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯০০ টাকা, হায়ারের দেড় টনের এসি ৭৩ হাজার ৪৯০ টাকা এবং এক টনের এসি ৫৫ হাজার ৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মার্কেটের বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের হাউজ অব বাটারফ্লাইয়ের বিক্রয়কর্মী আরিফুল ইসলাম বলেন, গরম আসার পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের এখানে গ্রাহকরা বেশি দামের এবং মধ্যম দামের এসি কিনতে পারবেন। গড়ে প্রতিদিন ৮-১০টি এসি বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে আবার দেড় টনের এসির চাহিদা বেশি। আমাদের বেশকিছু ক্যাশব্যাক অফার এবং ফ্রি ইন্সটলেশন সার্ভিসও কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে ক্রেতারাও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কক্ষ তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তাই অন্যান্য খরচ সংকুচিত করে তাই এসি কেনার দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
রাজধানীর উত্তরা থেকে এসি কিনতে আসা জাহাঙ্গির আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, দশতলা ভবনের আটতলায় আমার বাসা। প্রচণ্ড গরমে খুবই অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি। বড়রা গরম সহ্য করতে পারলেও ছোট বাচ্চা যারা রয়েছে তাদেরকে নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে, সেজন্য বাধ্য হয়ে কিন্তু এসেছি। এখনো কেনা হয়নি তবে ঘুরে ফিরে দেখছি। আমার দেড় টনের একটি এসি কেনার ইচ্ছা রয়েছে।
রবিউল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গরমের কারণে বৈদ্যুতিক পাখায় কাজ হচ্ছে না। বাচ্চারা অসহ্য হয়ে গেছে। বেশ কয়েকবার অসুস্থও হয়ে গেছে। সেজন্য এসি কিনতে এসেছি। আমার রুমের আয়তন অনুযায়ী দেড় টনের এসিই প্রয়োজন। বেশ কয়েকটি শোরুম ঘুরে দেখেছি। দাম খুবই সিমিলার। এখন কিনে বাসায় নিয়ে যাব।
আরএইচটি/জেডএস