প্রস্তুতির ঘাটতি আর তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে লাইনচ্যুত কক্সবাজার স্পেশাল
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের ডুলাহাজরা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সকালে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। কক্সবাজার স্পেশাল নামে ওই ট্রেনের লোকমোটিভসহ (ইঞ্জিন) দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। নতুন নির্মিত রেলপথের লুপ লাইন থেকে মেইন লাইনে যাওয়ার পয়েন্ট না মিলিয়েই ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) রেলওয়ের একাধিক সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
চট্রগ্রাম বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোল (পাহাড়তলী) রুম থেকে জানানো হয়েছে, লুপ লাইন থেকে মেইন লাইনে যাওয়ার সময় টেপ পয়েন্টে কোনো একটি সমস্যা হয়েছে। সেজন্য এই ঘটনা ঘটতে পারে।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি নতুন রেলপথের ফাংশনাল বিষয়গুলো পুরোপুরি চালু না করে ট্রেন অপারেশনে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। কয়েকদিন আগেও ওই লাইনে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন মুখোমুখি হতে গিয়েছিল। রেলওয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে না পারলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটবে।
রেলওয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি ডুলাহাজরা রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। যাত্রাবিরতি শেষে বুধবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে ট্রেনের লোকোমাস্টারকে রামু রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার জন্য ডাউন লাইন ক্লিয়ার দেন ডুলাহাজরা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার। লাইন ক্লিয়ার পেয়ে লোকোমাস্টার ট্রেন নিয়ে রওনা হন। সামান্য কিছু দূর যাওয়ার পর লোকোমাস্টার দেখতে পান লুপ লাইনটি মেইন লাইনের পয়েন্টের সঙ্গে মেলেনি। এমন সময় ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪/১৫ কিলোমিটারের মতো। লোকোমাস্টার চেষ্টা করেন পয়েন্টের আগেই ট্রেনটি থামাতে, কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। পরে লোকোমোটিভসহ আরও দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়।
আরও পড়ুন
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লোকোমাস্টারদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টেশনে একজন ইনচার্জ অথবা মাস্টার থাকেন, পয়েন্টস ম্যান থাকেন। তারা কি না দেখে লাইন ক্লিয়ার দেন? আজকে যদি এখানে থ্রো পাসে লাইন ক্লিয়ার হতো তাহলে কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো কোন হিসাব আছে?
তিনি বলেন, কক্সবাজারে লাইনে এখনো কোনো ধরনের কিলোমিটার সাইন নাই, সিগন্যাল স্ট্যান্ড নাই। এই রেললাইন এখনো প্রজেক্টের আন্ডারে রয়েছে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, থ্রো পাসের সময় স্টেশন অনুযায়ী ট্রেনের গতি থাকে ঘণ্টায় ১৬, ৩০ বা ৪৫ কিলোমিটার। যদি এরকম কোনো গতিতে এই ঘটনা ঘটতো তাহলে হাসানপুরের মতো ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতো।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েট অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেলের কর্তা ব্যক্তি যারা আছেন তাদের ধারণা শুধু লাইন তৈরি হলেই ট্রেন চালানো যাবে। রেলওয়ের যে একটা ব্যবস্থাপনা, তার যে একটা ব্যবস্থাপনা লাগে অর্থাৎ দক্ষ জনবল লাগে সেদিকে নজর দেয় না। আমরা যে কম্পিউটারভিত্তিক ইন্টারলকিং কথা বলছি, ওখানে (চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ) কিন্তু সিগন্যাল রেডি হওয়ার আগেই ট্রেন অপারেশনে চলে গেছে। সিবিআই সিস্টেমটা পুরোপুরি চালু না করেই ট্রেন চালানো হচ্ছে। এটা রেলওয়ে ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, রেল পরিচালনার জন্য স্মার্ট এবং দক্ষ জনবল দরকার। রেলওয়ে বরাবরই বলে আমাদের জনবল অর্ধেক। তাদেরকে যদি ওই অর্ধেক জনবলও দেওয়া হয় তাও তারা রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে পারবে না, নিরাপত্তা ঝুঁকিও কমাতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা মাঠপর্যায়ের কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে পারছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোল (পাহাড়তলী) রুম থেকে ঢাকা পোস্টকে জানানো হয়েছে, ডুলাহাজরায় ট্রেনটির স্টপেজ ছিল। লুপ লাইন থেকে মেইন লাইনে যাওয়ার সময় ওদের একটা টেপ পয়েন্ট আছে, সেখানে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। কী সমস্যা হয়েছে, সেটা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমাদের দিক থেকে কোনো ভুল ছিল না। ট্রেনটি মেইন লাইনে যাওয়ার সময় ডিরেইল হয়েছে।
এখানে স্টেশন মাস্টার বা পয়েন্টসম্যানের কোন ভুল ছিল কি না— জানতে চাইলে জানানো হয়, এটা মাস্টারের ভুল না কার ভুল তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না।
এমএইচএন/এমজে