প্রখর রোদে পিঠে খাবার নিয়ে ছুটছেন তারা
মো. সবুজ, বাড়ি নেত্রকোণায়। ফুড ডেলিভারি ম্যানের কাজ করছেন গত এক বছর ধরে। দিনে সাধারণত ১০ থেকে ২০টি পারসেল ডেলিভারি দেন। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই জীবনধারণ করেন তিনি। এমনিতেই খাবার ডেলিভারির কাজ করা অনেক কষ্টের, তার ওপর দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে কাজ করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে খাবার ডেলিভারি করতে দিতে বেশ কষ্টের মুখে পড়েছেন তিনি।
এই দাবদাহে ঢাকায় দুপুরের রোদে টেকা দায়। তীব্র গরমে একটুতেই হাঁসফাঁস শুরু হয়ে যায়। তবুও মাথার ওপরে থাকা সূর্যের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার সরবরাহ করছেন সবুজের মতো ফুড ডেলিভারিম্যানরা।
বিজ্ঞাপন
সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারাদিনে মূলত ১০ থেকে ২০টি পারসেল ডেলিভারি দেই। এতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো উপার্জন হয়। গরম বাড়ার পর থেকে অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে গেছে, মানুষ খুব একটা বাইরে বেরোতে চাচ্ছে না। এখন চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছি আমরা। কারণ এই গরমে ডেলিভারি করাটা বেশ কষ্টের। তবুও করতে হয়, বেশি ডেলিভারি দিলে টাকাটাও বেশি আসে।
সবুজের মতোই ফুড ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করছেন রাব্বি। থাকেন ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায়, গ্রামের বাড়ি খুলনায়। এই পেশায় আসার আগে একটি বায়িং হাউজে চাকরি করতেন তিনি।
উত্তরা হাউজবিল্ডিং রোডে তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। বায়িং হাউজের চাকরি ছেড়ে এ পেশায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বায়িং হাউজে কাজের অনেক চাপ। পাশাপাশি বেতনও খুব একটা বেশি না। এদিক থেকে ডেলিভারির কাজে একটা স্বাধীনতা আছে। যখন মন চায় কাজ করলাম, আবার যখন মন চায় করলাম না। আর আয়ও মন্দ নয়।
এই কাঠফাঁদা গরমে কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইদানীং কাজ করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। আগে টানা ডেলিভারি দিতাম, এখন দুপুরে ১ থেকে ২ ঘণ্টা রেস্ট নিতে হয়। না হলে কাজ করার মতো শক্তি পাওয়া যায় না।
কথা হয় আরেক ফুড ডেলিভারিম্যান সাব্বির আহমেদের সঙ্গে। পড়াশোনার পাশাপাশি এ পেশায় যুক্ত আছেন তিনি। সাব্বির বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটা করা যায়, টাকাও মোটামুটি ভালো আসে। দিনে ১৫ থেকে ২০টি পারসেল ডেলিভারি দেই, যা টাকা আসে এতে আমার খরচ মিটে যায়।
তিনি বলেন, ইদানীং গরমে কাজ করতে একটু কষ্টই হচ্ছে। অর্ডারের চাপও আগের চাইতে বেড়ে গেছে। তবুও ডেলিভারির পরিমাণ কমিয়ে দেইনি। সকাল থেকে ডেলিভারি করি, দুপুরের দিকে কাজ বন্ধ রাখি। পরে আবার কাজ শুরু করি। অনেক সময় দুই ঘণ্টা কাজ করলে এক ঘণ্টা বিরতি নিতে হয়।
ফুড ডেলিভারিম্যান আশরাফ হোসেন বলেন, গরম লাগলেও কাজ করতে হয়, না হলে টাকা আসবে না। এটা তো আর বেঁধে দেওয়া বেতনের চাকরি না। ডেলিভারি বেশি দিতে পারলে টাকাটাও বেশি আসে। এই গরমে তো প্রচুর কষ্ট হয়, গলা বারবার শুকিয়ে যায়, সাইকেল চালানোর মতো জোর পাওয়া যায় না। তবুও সহ্য করে কাজ করে যাই।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে। এ সময়ে দিনের তাপমাত্রা বাড়লেও কমবে রাতের তাপমাত্রা। তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে বলেও বলা হয়েছে। আগামী পাঁচদিনের এই তাপপ্রবাহ প্রশমনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
ওএফএ/এআর/কেএ