‘গরমে কামের কষ্ট কয়েকগুণ বাইড়া গেছে’
রাজধানীতে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মো.আবুল কাশেম। থাকেন কড়াইল বস্তিতে। রাজধানীর শ্যামবাজার থেকে শুকনো মরিচসহ বিভিন্ন মসলা ও পেঁয়াজ একাধিক গন্তব্যে নিয়ে যান তিনি। তবে গত কয়েক দিনের গরমে ভ্যান গাড়ি চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে তার। বারবার জিরিয়েও গাড়ি নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিতে তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
প্রচণ্ড গরমে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতার বিষয়ে আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আমার বেশিরভাগ ট্রিপ থাকে শ্যামবাজার থেকে মাল নিয়ে নদ্দা, কালাচাঁদপুর, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় আসা। আজ শুকনা মরিচ নিয়ে শ্যামবাজার থেকে নদ্দা যাচ্ছি। রাস্তায় এখন পর্যন্ত তিনবার জিরাইছি, তারপরও গাড়ি চালাতে কষ্ট হইতাছে। সূর্যের তাপ ঘামে শরীর দেখলে মনে হইতাছে যেন গোসল করছি। গরমে গাড়ি চালানোর কষ্ট কয়েকগুণ বাইড়া গেছে। এভাবে গরম থাকলে সামনে আর আগের মতো ট্রিপ নিতে পারমু না।’
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরমে এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো বলেন ভ্যানচালক মো. আবুল কাশেম।
মূলত সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহ। যা আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে দেশের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের তুলনায় পশ্চিমাঞ্চল হিট ওয়েভে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর ফলে শুধু আবুল কাশেম নয়, তার মতো আরও বেশ কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষ জানিয়েছেন তাদের কষ্টের কথা। তারা জানান, প্রচণ্ড গরমে বার বার হাঁপিয়ে উঠছেন। আগের তুলনায় এই গরমে তাদের কাজ করার ক্ষমতা কমে গেছে। এতে করে দিন শেষে তাদের আয়ও হচ্ছে কম।
আরও পড়ুন
রাজধানীর গুলশান গুদারাঘাট এলাকার রিকশাচালক ইয়াসিন হোসেন বলেন, ‘এই গরমে গাড়ি টানতে পারছি না। একটা ট্রিপ মাইরা একবার করে জিরাইতে হয়। রাস্তায় গাড়ি চালাতে গেলে মনে হয় শরীর যেন পুইড়া যাইতেছে। আর বাসায় গিয়েও শান্তি নাই, সেখানেও গরম। এই গরমে বেশি ট্রিপ মারতে পারি না। এতে দিন শেষ টাকাও কম পায়। সবমিলিয়ে এই গরমে খুব খারাপ অবস্থা।’
রাজধানীর শাহজাদপুর বাশতলা এলাকার একটি ইট, বালু ও সিমেন্টের দোকানে কাজ করেন শ্রমিক মো. আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘মাথায় মাল নিতে এত কষ্ট হয় না, যত কষ্ট গরমে হয়। দুইবার মাথায় মাল নিলে শরীর ঘামে ভিজে যায়। আবার কিছুক্ষণ জিরাইলে মাল নিতে পারি। বার বার জিরাইলে মালিক দেয় বকা। কিন্তু এই গরমে না জিরাইলে তো বাঁচমু না। এই গরমে ভারী-বোঝার কাজ করা অনেক কষ্ট। আর কয়েকদিন যদি এভাবে গরম চলতে থাকে তাইলে আর কাজে আমু না।’
তীব্র এই গরম নিয়ে যা বলছে আবহাওয়া অফিস
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের উপর দিয়ে গত কয়েকদিন হিট ওয়েভ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলেই আমরা তাকে হিট ওয়েভ বলি। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ জেলার উপর দিয়ে হিট ওয়েভ অব্যাহত আছে এবং থাকবে।
তিনি জানান, আমাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী— ঢাকার কিছু অংশ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ মূলত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দু’এক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের পশ্চিমাঞ্চল রংপুর, রাজশাহী, খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে হিট ওয়েভ অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে সারা দেশে আবহাওয়া অফিসের আওতাধীন ৪৪টি স্টেশনের মধ্যে ২৬টি স্টেশনের হিট ওয়েভ রেকর্ড করা হয়েছে।
এমএসি/এমজে