অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত হাজারো বিড়ম্বনা। তবুও স্বজনদের সান্নিধ্য পেতে বাড়ি ফেরার ব্যাকুলতা আর উচ্ছ্বাস বলে দিয়েছিল ঘরে ফেরার আনন্দ কতটা, শেকড়ের টান কতটা কাছে টানে। শত বিড়ম্বনা-ভোগান্তি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরেছেন মানুষ। তাদের বাড়ি ফেরার এই আনন্দ চলেছে ঈদের আগ রাত পর্যন্ত। এই মানুষগুলো ছাড়াও তিলোত্তমা নগরীতে আরও এক শ্রেণীর মানুষ ছিল, যাদের ঈদের আগে ছুটি মেলেনি, কিংবা ভিন্ন কারণে যেতে পারেননি। আর এসব মানুষের কিছু অংশ ঈদের পর আজ ঢাকা ছাড়ছেন নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে—শেকড়ের টানে।

মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের চার দিনে রাজধানী ছেড়েছেন ৬০ লাখের মতো মুঠোফোনের সিমধারী। 

এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু গেল সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবস বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছিলেন। এরপর শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ও মাঝে রোববার পবিত্র শবে কদরের ছুটি ছিল। পবিত্র ঈদুল ফিতরে এবার লম্বা ছুটি রয়েছে। ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। এর পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার পয়লা বৈশাখের ছুটি। এতে অনেকেই টানা পাঁচ দিন ছুটি পেয়েছেন।

তবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই এই ছুটি না পাওয়ার কারণে কিংবা ভিন্ন ব্যস্ততায় ঈদের আগে বাড়ি যেতে পারেননি, তারা আজ ঢাকা ছাড়ছেন। রাজধানীর বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন, লঞ্চ ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের পরের দিন অনেক মানুষ আজ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। আর এই ঈদের পরের দিন ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। রাজধানী ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস, ট্রেন গুলোতে প্রচুর যাত্রী রয়েছে। 

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য এনা বাসের টিকিট কেটেছেন খোরশেদ আলম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি তার দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের পরের দিন গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। 

আলাপকালে খোরশেদ আলম বলেন, একটি অনলাইন কেনাকাটার প্রতিষ্ঠানে আমি চাকরি করি। ঈদের সময় প্রচুর চাপ থাকার কারণে আমি এবার ঈদে ছুটি পাইনি। যে কারণে আজ ঈদের পরের দিন পরিবারসহ বাড়ি যাচ্ছি। ঈদে বাড়ি না গেলে একটা অপূর্ণতা কাজ করে, সবারই তো গ্রামের বাড়ির প্রতি টান থাকে। তাই আজ থেকে তিন দিনের ছুটি পাওয়ার কারণে বাড়ি যাচ্ছি। আমার মত অনেক মানুষই আজ বাস টার্মিনালে এসেছেন, পুরো বাস টার্মিনাল যাত্রীতে ভরা। এসব মানুষও হয়তো ঈদের ছুটি পায়নি, যে কারণে তারা আমার মত আজ বাড়ি ফিরছে। 

কমলাপুর থেকে দুপুরের রাজশাহীর ট্রেনের টিকিট কেটেছেন জিহাদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার পরিবারসহ আজ ঈদের পরের দিন রাজশাহীর গ্রামের বাড়িতে যাবেন। তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় আমার একটি মুদির দোকান আছে। যেহেতু দোকানে চাঁদ রাত থেকে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত বেচাকেনা হয় তাই বাড়ি যাওয়া হয়নি। প্রতিবারই আমরা ঈদের পরের দিন গ্রামের বাড়ি যাই। আসলে ঢাকায় ব্যবসার জন্য, চাকরির জন্য আমরা পড়ে থাকি কিন্তু আমাদের সবার মন তো সেই গ্রামের বাড়িতে পড়ে থাকে। মূলত সে কারণেই আজ পরিবারসহ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। ঈদের পরের দিন রাজধানীবাসীর একটি ছোট্ট অংশ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যায়। আমরাও সেই তালিকায় পড়েছি। 

মহাখালী বাস টার্মিনালের সৌখিন নামক এক বাসের সুপারভাইজার মাসুদ রানা বলেন, আজ সকাল থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে প্রচুর যাত্রী আছে। যারা দূরপাল্লার বাস ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন। মূলত যারা ঈদের ছুটি পায়নি, ঈদের আগে যেতে পারেনি তারাই মূলত আজ বাস টার্মিনালে এসেছেন। আমাদের বাসও মুহূর্তের মধ্যে যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে সবাই আগে কিছু না কিছু ভাড়া বেশি নিলেও, আজ স্বাভাবিক বাড়াতেই যাত্রীরা যেতে পারছেন। মহাখালীর সব বাস কাউন্টার, বাসগুলোতে আজ পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছে সকাল থেকেই। 

গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরে কথা হয় সিএনজি চালক বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল ঈদের দিন সিএনজি চালাইনি তাই আজ সকাল সকাল সিএনজি নিয়ে বের হয়েছি। ভেবেছিলাম আজ তেমন যাত্রী পাব না কিন্তু সকাল থেকে বেশ কয়টার ট্রিপ ইতোমধ্যে মেরেছি। এসব ট্রিপের বেশিরভাগই রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশনের যাত্রী।‌ কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা একাই আমার সিএনজিতে করে বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশনে গেছেন। হয়তো তারা ঈদের আগে বাড়ি যেতে পারেননি বলেই আজ ঈদের পরের দিন বাড়ি যাওয়ার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আমি সকাল থেকে যাত্রী নিয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল‌ আর কমলাপুর স্টেশনে যাত্রী নিয়ে গেছি। তারা সবাই ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে এসব টার্মিনাল, স্টেশনে গেছেন। 

এএসএস/এমএসএ