সময় তখন দুপুর দেড়টা। কড়া রোদ। লবণ মাঠে কাজ করছেন এক চাষি। মাঠের আল ধরে চলছে তার কর্মযজ্ঞ। গুগলের ওয়েদার চার্ট অনুযায়ী এখানকার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন রোদে স্বাভাবিকভাবে জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হয় না লোকজন। অথচ এই চাষি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠে, মাথায় গামছা বেঁধে সারছেন জীবিকার কাজ। সারাদেশে যখন ঈদ উৎসব চলছে, তখন চাষি লবণ মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বলছিলাম কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের লবণ চাষি শফিউল আলমের কথা। ঈদের দিন দুপুর দেড়টার দিকে ওই চাষির সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট।

ঈদের দিন কেন মাঠে কাজ করছেন, জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, অভাবের সংসার। কাজ না করলে ভাত জুটবে না। তাই কাজ করতে আসা। আর রোদ বেশি পড়লে লবণ বেশি উৎপাদন হয়, তাই কাজ করতে এসেছি।

তিনি বলেন, ঈদের নামাজ পড়ে মা-বাবার কবর জেয়ারত করে বাড়িতে গিয়েছিলাম। একটু সেমাই খেয়ে কাজ করতে এসেছি।

শফিউলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মাঠেই হাজির তার স্ত্রী হাছিনা বেগম। স্বামীর জন্য পানি আনলেন তিনি। স্বামীর কাজে সহযোগিতাও করেন তিনি।

এর পাশে আরেকটি জমিতে কাজ করেছিলেন চাষি জহিরুল ইসলাম। তার সঙ্গেও কথা বলে ঢাকা পোস্ট।  তিনি বলেন, ‘লবণ মাঠের কাজ নিয়মিত করতে হয়। এখানে একদিন কাজ না করলে সবকিছু উলটপালট হয়ে যাবে। তাই কাজ করতে হচ্ছে।’

শুধু শফিউল, জহির নয়; উজানটিয়া ইউনিয়নের সুতাচোড়ার এই মাঠে কাজ করছেন অন্তত ৩০০ চাষি। 

আরিফুল ইসলাম আজিম নামে এক চাষি বলেন, ‘এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে লবণ চাষ করে। লবণ মাঠের পরিচর্যা নিয়মিত করতে হয়। সেজন্য কাজ করতে হচ্ছে। সবাই ঈদে আনন্দ করতেছে। আমাদের আনন্দ লবণ মাঠে।’

কক্সবাজার উপকূলের অবহেলিত এলাকা এই পেকুয়া উপজেলা। সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। এরমধ্যে উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের মধ্যে চাষ হয় লবণ। বঙ্গোপসাগর লাগোয়া এই তিন ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের পেশা লবণ চাষ ও মাছ চাষ। এখানে প্রায় ১২ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকার প্রায় ৫-৬ হাজার চাষি লবণ উৎপাদনের কাজ করেন। এদের সবার ঈদ কাটছে এভাবে।

বাংলাদেশের লবণশিল্পে এখনো নেতৃত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকেই বাংলাদেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লবণ সরবরাহ করা হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগে যেটুকু লবণ চাষ হয়, তার অধিকাংশই হয় কক্সবাজার জেলায়। আবার কিছু লবণ চাষ হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। এই পুরো বিষয়টি তদারক করা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) পক্ষ থেকে। 

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩৯ হাজার চাষি বাঁশখালী ও কক্সবাজার জেলায় লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই অঞ্চলে লবণ উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন। চাষ হয়েছিল প্রায় ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর। আর উৎপাদিত লবণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।

আরএমএন/জেডএস