রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার পশ্চিম কাফরুল (তালতলা) মোল্লাপাড়ার ১৭১নং বাসার দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে গৃহবধূ মজিদা খাতুন ডলি বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। এর মধ্যে একটিতে ছেলে মোদাব্বির রহমান সাদাফকে (১৮) হত্যা ও মেয়ে সিনথিয়াকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা নং-১০। অপর মামলাটি স্বামী মশিউর রহমানের আত্মহত্যার অভিযোগ তুলে অপমৃত্যুর। মামলা নং-১৯।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার তালতলা মোল্লাপাড়া এলাকার একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে বাবা-ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একজনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায়, অপরজনের মরদেহ বিছানা থেকে উদ্ধার করা হয়। পাশের কক্ষে তখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল মেয়ে সিনথিয়া। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ওসি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য ও মশিউর রহমানের স্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে, ঘটনার আগে তিনি টিউশনিতে গিয়েছিলেন। বাসায় আসার পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন স্বামী ঝুলছে, ছেলে মৃত ও মেয়ে অচেতন। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। স্বামী ও ছেলের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহবাহী গাড়ি বগুড়ার গাবতলীর পথে।

মো. আহাদ আলী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিনথিয়াকে বাঁচাতে মা ডলি ঢাকাতে রয়ে গেছেন। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। ঘটনার নেপথ্যে কী কারণ ছিল। তবে মামলার এজাহারে স্ত্রী মজিদা খাতুন ডলি ঋণের চাপ ও হতাশার কারণে ছেলেকে হত্যা, মেয়েকে হত্যাচেষ্টাসহ নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

এর আগে ওই বাসা থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য মতে তাতে এমন লেখা ছিল– ‘আমার বাসায় দুটি মেয়ে সাবলেট থাকে। ওরা ঈদের ছুটিতে কয়েকদিন আগে বাড়ি গেছে। ওদের যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়। ওরা এই ঘটনায় জড়িত নয়।’

এমন একটি চিরকুটের সূত্র ধরেই মূলত পুলিশের ধারণা, বাবা মশিউর রহমান (৫০) প্রথমে মেয়েকে হত্যার চেষ্টা করেন। এরপর ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর নিজে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে পড়েন রশিতে।

ঘটনার রাতে ওই বাসার কেয়ারটেকার মো. মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর ধরে মশিউর রহমান এ বাড়ির দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। ওই ফ্ল্যাটে তিনটি রুম রয়েছে। দুটি রুমে তারা থাকতেন। মাঝের একটি রুম দুজন তরুণীর কাছে সাবলেট দিয়েছেন।

তিনি বলেন, রোববার দুপুরে মশিউর রহমানের স্ত্রী ডলি আক্তার টিউশনি করতে বাসা থেকে বের হন। বিকেল ৪টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। এক ঘণ্টা ধরে দরজায় ধাক্কাধাক্কি, ডাকাডাকি ও কলিং বেল টিপে সাড়া না পাওয়ায় আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। ম্যানেজারের নির্দেশে আমিও সেখানে যাই। সাড়া না পেয়ে পেছনের দিক দিয়ে গ্রিল ডিঙিয়ে বারান্দায় উঠে জানালা দিয়ে মেয়েটিকে লাঠি দিয়ে গুঁতো দিলে দেখি নড়ে। কিন্তু উঠতেও পারছিল না, কথাও বলতে পারছিল না।

‘পরে মজিদা খাতুন দরজা ভাঙার কথা বলেন। দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখি মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে এবং ভেতরের রুমে মশিউর রহমান ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন। আর বিছানায় ছেলের নিথর মরদেহ। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। আর মাসহ স্থানীয়রা মেয়ে সিনথিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

কেন এ ঘটনা কিছু জানেন কি না– জানতে চাইলে মো. মোস্তফা বলেন, কিছু করছে জানি না। কখনো তো তাদের মধ্যে কোনো গ্যাঞ্জামের খবর পাইনি। কালও তো দেখলাম চকলেট নিয়ে বাসায় ফিরছে। ম্যানেজার ভাড়া চাইছিল। বলেছিল আজ রাতে দেবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত মশিউর রহমান বগুড়ার গাবতলী থানার বাউতলার কুদ্দুস মন্ডলের ছেলে। গত তিন বছর ধরে তিনি পশ্চিম কাফরুলের এই বাসায় ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। মশিউর রহমান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পাশাপাশি শেয়ার ব্যবসা করতেন। স্ত্রীর ডলি আক্তার একসময় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তবে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এলাকায় টিউশনি করেন তিনি। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন দুপুরে টিউশনিতে গিয়েছিলেন মশিউর রহমানের স্ত্রী।

ওই বাড়ির ম্যানেজার আব্দুল মালিক ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, মশিউর রহমান শেয়ার ব্যবসায় ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। শুনছি নিজের ভাগ্নের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋণী তিনি। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অনবরত চাপ ছিল। তাছাড়া তিনি নাকি উত্তরায় একটি প্লট কিনেছেন কিন্তু সেটি বেদখলে। সেটা নিয়েও তিনি চাপে ছিলেন।

জেইউ/এসএসএইচ