চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী নেতাকে দলবল নিয়ে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার নেতৃত্ব মারধর করা হয় ব্যবসায়ীকে। এ সময় ওই কর্মকর্তা নৌ বাহিনীর পোশাক পরিহিত ছিলেন।  

অভিযোগ উঠেছে, ওই কর্মকর্তা তার শ্বশুরের পক্ষ নিয়ে মার্কেটের ভেতরে দলবল নিয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর করেছেন। 

কর্মকর্তার নাম কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা। কাজেমীকে গত বছরের অক্টোবরে নৌবাহিনী থেকে প্রেষণে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, নগরীর আগ্রাবাদে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটে দোকান মালিক সমিতির অফিস কক্ষে যান প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী ও স্টেট অফিসার রেজাউল করিম। সেখানে চেয়ারে বসে ছিলেন সমিতির প্রচার সম্পাদক মনির হোসেন বাপ্পী। তার পাশে সমিতির আরও কয়েকজন নেতা। কাজেমী ও রেজাউলের নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশনের একদল নিরাপত্তা রক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। দলটি অফিসে ঢুকেই সমিতির নেতাদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ায়। একপর্যায়ে মনির হোসেনকে মারতে শুরু করেন স্টেট অফিসার রেজাউল করিম। এরপর অন্যরা যোগ দেন। ভিডিওতে সিটি কর্পোরেশনের স্ট্রাইকিং ফোর্সের পোশাকধারীদেরও লাঠি দিয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, মার্কেটের ৩৭১ নম্বর দোকানটির মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রকৌশলী আবদুল মালেক। তিনি প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমীর শ্বশুর। দোকানটি মনির ও জাকির হোসেন নামে দুই ভাই ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন। মন্দার কারণে তারা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন। দোকান মালিকের কাছে তাদের ১১ লাখ টাকা জামানত ছিল। 

ভাড়াটিয়া ও মালিকের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিয়ম অনুযায়ী সমিতি তা মিটমাট করে দেয়। এ ক্ষেত্রেও সমিতি তা করতে গেলে দোকান মালিক প্রভাব দেখাতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে হামলার ঘটনা ঘটে। মারধরের সেই দৃশ্য সমিতির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়রের নির্দেশে একটা বন্ধ দোকান উচ্ছেদ করতে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ওই মার্কেটে যাই। একপর্যায়ে দোকান মালিক সমিতির একজন আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে উচ্ছেদে থাকা কর্মীরা তার ওপর চড়াও হয়। 

ভিডিও ফুটেজে মারধরের দৃশ্য রয়েছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি সমিতির ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কয়েক দিন আগে ওই দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবদুল মালেকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে যাই।’ 

সাবেক ওই কর্মকর্তা তার শ্বশুর কি না সে প্রশ্নে চুপ থাকেন কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমী। 

মারধরের শিকার মনির হোসেন বাপ্পী বলেন, আমি সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মার্কেটের তৃতীয় তলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তৃতীয় তলার ৩৭১ নম্বর দোকানটি নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছিল। সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে নিয়মমাফিক আলাপ আলোচনা করছিলাম অফিসে। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা সমিতির কোনো কথা না শুনে আমার ওপর হামলে পড়ে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে তারা। এ সময় সমিতির অফিস সহকারী মাহমুদুল হক জামশেদকেও তারা মারধর করে। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ 

দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি দস্তগীর আজাদ জানান, মনির হোসেন বাপ্পী আমাদের মার্কেটের ৩৩৩ জন ব্যবসায়ীর নির্বাচিত প্রতিনিধি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা তাকে এভাবে মারধর করতে পারেন না। এ নিয়ে আমরা মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। 

এনএফ