বেইজিংয়ের প্রস্তাব আসছে বারবার, প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রথম সফর’ কোথায়?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর ভারত দিয়ে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সফরের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও আশা করা হচ্ছে জুনের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে দিল্লি যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেইজিং নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। পারলে চলতি রমজানের মধ্যেই যেন এ সফরটি হয়ে যায়- এরকম একটা প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, রমজানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করেন না। এখন বেইজিংয়ের চাওয়া, চলতি বছরের মধ্যে অবশ্যই যেন চীন সফরে যান শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন দেয় ভারত ও চীন। প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর কোথায় করবেন সেটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হয় ঢাকাকে। ধারণা করা হচ্ছে চীনের দিক থেকে প্রথম আমন্ত্রণ পেলেও প্রধানমন্ত্রী প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য ভারতকে এগিয়ে রাখবেন। দিল্লিও চাইবে না সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা আগে বেইজিং সফর করুক।
ঢাকার এক কূটনীতিক জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর ভারতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মে মাসের শেষ পর্যন্ত ভারতে নির্বাচন হবে। ৪ জুন সেখানে নতুন সরকার গঠিত হবে। ১৬ জুন কোরবানির ঈদ। সবকিছু মাথায় রেখেই তারিখ চূড়ান্ত হবে। সফরটা জুনের মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে হতে পারে।
আরও পড়ুন
সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, মাত্রই ভুটানের রাজা বাংলাদেশ সফর করলেন। আমরা তার সফরে গুরুত্ব দিচ্ছিলাম। তাই এখনো ভারত সফরের বিষয়ে কাজ শুরু করিনি। মে মাসের দিকে এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর দিল্লিতে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। একটা বড় সফর করতে গেলে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। ইস্যুর ওপর এখনো ফোকাস করা হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নানা দিক বিবেচনায় বেইজিংয়ের চেয়ে দিল্লিকে এগিয়ে রাখতে হয় ঢাকাকে। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শক্তি হিসেবে ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক তো আছেই। পাশাপাশি বর্তমান বাস্তবতা হলো, পশ্চিমা অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে দিল্লিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ঢাকা।
সূত্র বলছে, আলোচনার বিষয়বস্তু ঠিক না হলেও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নসহ একাধিক অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে। দুই দেশের মধ্যে কিছু চুক্তি-সমঝোতা স্মারকও সই হতে পারে এই সফরে।
গত বছরের (২০২৩) সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এবং একান্ত বৈঠক করেন তিনি। বাংলাদেশে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে ওই সফর ছিল সরকারপ্রধান হিসেবে শেষ সফর।
টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনা প্রথম বিদেশ সফর করেন জার্মানিতে। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশটিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দেন। তবে সেটি দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল না, বহুপাক্ষিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের বিষয় ছিল। দিল্লি সফরের আগে এমন আরও কয়েকটি বহুপাক্ষিক ফোরামে যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটি। নতুন সরকার গঠনের পরপর সরকারপ্রধানকে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শি জিনপিং। চলতি রমজানের মধ্যেও শেখ হাসিনাকে চীন সফর করার একটা ‘তড়িঘড়ি’ প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার এক কূটনীতিক জানান, চীনের চাওয়া হলো দ্রুত একটা ভিভিআইপি সফর হোক। তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা তো এমনও প্রস্তাব দিয়েছে— এই রোজার মধ্যেই সফরের ব্যবস্থা করা যায় কি না! তাদের বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী রোজায় কোথাও যান না। আর একটা ভিভিআইপি ভিজিট করতে গেলে অনেক প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। চুক্তি-সমঝোতার ব্যাপারও থাকে। প্রস্তুতি না নিয়ে তো যাওয়া যায় না। ওরা (চীন) বিষয়টা বুঝেছে। এখন ওদের প্লান হলো এ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বেইজিং সফরে নেওয়া। ওরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফয়েজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক, আবার চীনের সঙ্গেও। একেকটা কারণে একেকটা দেশ আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ। কোথাও আগে সফরে গেলাম আর কোথাও পরে গেলাম, তার মানে এই নয় আমি তোমাকে অপছন্দ করি বা কম দেখতে পারি। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১৯ সালের পর দুই শীর্ষ নেতা ওই বৈঠকে বসেন। এখন প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গেলে আবার তাদের মধ্যে বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনআই/এমজে