চট্টগ্রামে পুরোদমে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি হাত বাড়ালেই মিলছে ভারতীয় পণ্য। এসব ভারতীয় পণ্যের বড় একটি অংশ আসে চোরাই পথে। যার ফলে বিপুল অঙ্কের শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের বাজারেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে চোরাই পথে কাপড় এলেও এখন কাড়াকাড়ির কারণে তা বন্ধ আছে। কিন্তু, তাদের এ দাবির সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। 

ব্যবসায়ীদের ধারণা, এ বছর ঈদবাজারকে ঘিরে চট্টগ্রাম শহরে ২৫ হাজার কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হবে। আর এ ঈদ বাজারের বড় একটি অংশ ভারতীয় কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল। 

রোববার (৩১ মার্চ) রাতে চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজার ও টেরীবাজারারের একাধিক মার্কেটে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের বাজার জমে উঠেছে। সব মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি রয়েছে। নিজেদের পছন্দমতো কাপড় কিনছেন তারা। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি কাপড় বলে বিক্রি করছে দোকানিরা। 

টেরীবাজারের সানা ফ্যাশন মল, মনে রেখ, পরশমণি, মল ২৪ ও জারা সপসহ একাধিক মার্কেটের চিত্র একই। ভারতীয় ও পাকিস্তানি পণ্য বলে বিক্রি করা হলেও আমদানির কোনো স্টিকার কাপড়ে নেই। তবে, নিজস্ব প্রাইস টেগ লাগিয়ে বিক্রি হচ্ছে থ্রি-পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা ও পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পণ্য।

রিয়াজুর বাজারের প্যারাগন সিটি ও বিনিময় টাওয়ারের শত শত দোকানেও চলছে এই কায়দায় বিক্রি। ভারতীয় শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, জিন্সের প্যান্ট ও শার্ট, রকমারি পাঞ্জাবি, থ্রি পিস, টু পিস, জর্জেট শাড়ি, ওড়না, টি-শার্ট, শিশু পোষাক, উন্নতমানের বোম্বে প্রিন্ট শাড়ি, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক, কাতান ও বেনারসিসহ কসমেটিকস আইটেম বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্যের গায়ে নেই আমদানিকারকের কোনো স্টিকার ও মূল্য তালিকা। কিন্তু ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট বলে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার টেরীবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ইন্ডিয়ান পণ্য আমদানি করতে গেলে টাকা বেশি খরচ হয়। সেজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু চোরাইপথে আনা জিনিসগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক দিতে হয় না। যার কারণে কম দামে বিক্রি করা যায়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোরাই কাপড়ের কারণে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় কাপড়ের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা দরকার।

টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে বিক্রি মোটামুটি হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যেরও কিছু চাহিদা আছে। বাজারে থাকা ইন্ডিয়ান কাপড়গুলো বৈধ পথে আসা। এখন আগের মতো রিস্ক নিয়ে কেউ চোরাই পথে কাপড় আনে না।

রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছালামত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে অধিকাংশই পাইকারি বিক্রির দোকান। বাজারে ইন্ডিয়ান পণ্য একেবারে কম। দোকানদারা হয়তো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ইন্ডিয়ান কাপড় বলছেন। বাস্তবে বাজারে ইন্ডিয়ান কাপড় কম। চোরাই পথে কাপড় আসে না বলে দাবি তার।

বাজারে অভিযানের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। ঈদ বাজার ঘিরে নিয়মিত অভিযান চলছে। কোনো কিছু কেনার ক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও সতর্ক থাকা উচিত।

আরএমএন/কেএ