পবিত্র মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন চলছে। সেই সঙ্গে ঘনিয়ে আসছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদের খুশিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে এই দিনে নতুন পোশাক পরিধান করেন সবাই। তাইতো এখন ধুম পড়েছে নতুন জামাকাপড় কেনার। পায়জামা-পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি পিস, শার্ট-প্যান্টসহ নানান ডিজাইনের নতুন সব পোশাক নিজের ও পরিজনের জন্য কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতারা। সকাল থেকে শুরু হওয়া ক্রেতাদের ঢল সারা দিন শেষে কমেনি মধ্যরাতেও। এসব ক্রেতাদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যায় বেশি দেখা গেছে।

রোববার (৩১ মার্চ) রাত পৌনে বারোটার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত এবং এলিফ্যান্ট রোড থেকে বাটা সিগন্যাল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের মার্কেট, বিপণী বিতান, শপিং মল এমনকি ফুটপাতেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখন রাত বারোটার কাছাকাছি। মার্কেটের ভেতরে বিক্রয় কর্মীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। ফুটপাতের দোকানিরাও হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। মানুষের ভিড়ের কারণে সড়কেও যানজট তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যে নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও নূরজাহান ম্যানশনে নারী ক্রেতার পরিমাণ রয়েছে চোখে পড়ার মতো। এসব মার্কেটে শাড়ি, থ্রি পিস ও মেয়েদের কাপড় থাকার কারণে মধ্য বয়স্ক এবং তরুণীদের বেশ আগ্রহ নিয়ে ভেতরে ঘুরতে দেখা গেছে।

আর সায়েন্স ল্যাবের বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট ও প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এর বাইরে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার ও এলিফ্যান্ট রোডের অন্যান্য দোকানেও বেশ জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে।

এ বছর কাপড়ের বিক্রি নিয়ে বেশ সন্তুষ্টির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি অনেক ভালো। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতিও তত বাড়ছে।

রাজা মিয়া নামের এক পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের বেচাবিক্রি বেশ ভালোই চলছে। প্রতিদিন অনেক মানুষজন আসছেন। আমরা অল্প লাভে অধিক জিনিস বিক্রি করতে চাই। বিক্রি নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। এতোদিন যা হয়েছে, তার চেয়েও শেষ ১০ দিনে বেশি বিক্রি হবে। ব্যবসার জন্য এখন নির্ধারিত সময় নেই। রাত একটা-দুইটা পর্যন্ত মানুষের উপস্থিত থাকবে।

আরিফ হাওলাদার নামের একজন শাড়ি ও থ্রি পিস ব্যবসায়ী বলেন, সারাদিনই ভালো পরিমাণ ক্রেতা আসছেন। অনেকের ছুটি হয়ে গেছে। তাই অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন। সেজন্য এখন ভিড় বেশি। বিক্রি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।

অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, দিনের বেলায় রোজা রেখে কেনাকাটা করা কষ্টকর। সেজন্য রাতে মার্কেটে এসেছেন তারা।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে শপিং করতে আসা শিমু আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, সারাদিন রোজা রেখে পরিবার-পরিজন সামলে কেনাকাটা করতে আসা কষ্টকর। সেজন্য ইফতারের পর এসেছি। ভিড় তো একটু আছেই। তারপরও পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। আর মানুষের উপস্থিতিও অনেক। সবমিলিয়ে ভালোই লাগছে।

হাবিবা সাইমুন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাচ্চাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। টিকিট কাটাও কমপ্লিট। ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি চলে যাব। সেজন্য শপিং করে নিচ্ছি। বাচ্চাদের জন্য কাপড় আগেই কিনেছি। আজ বাবা-মা ও শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য জামা-কাপড় কিনলাম। ভালোই লাগছে।

এদিকে, নিউমার্কেটে শপিং করতে আসা বিপুল পরিমাণ ক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন নিউমার্কেট থানা পুলিশের সদস্যরা। অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমের তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে অপরাধ ঠেকাতে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।

নিউমার্কেট থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হালদার অর্পিত ঠাকুর বলেন, রোজার শুরু থেকেই আমাদের কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে এবং নির্বিঘ্নে যেন এখানে মানুষজন শপিং করতে পারেন, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়া, সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি করছেন বলেও জানান তিনি।

আরএইচটি/কেএ