শয্যাশায়ী কর্মকর্তাকেও বদলি করে দুদক, ৮ দিনের মাথায় মৃত্যু
বছরের পর বছর কর্মরত থাকার পরও অদৃশ্য আশীর্বাদে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কর্মরত আছেন এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। তবে, ব্যতিক্রম চাঁদপুর কার্যালয়ের কোর্ট সহকারী (এএসআই) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার ক্ষেত্রে। হার্ট অ্যাটাকের রোগী হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী থাকা অবস্থায় গত ২১ মার্চ তাকে বদলি করা হয়। শুধু তাই নয় গত ২৮ মার্চ সহকর্মীদের কাঁধে ভর দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও মন গলেনি কর্তৃপক্ষের। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে কর্মরত এএসআই মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা অকালে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন। মৃত্যুর আটদিন আগে তাকে চাঁদপুর থেকে পাবনায় বদলি করা হয়। পরিবার সূত্রে যতটুকু জানি, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হার্ট অ্যাটাকের কারণে তার হার্টে রিং পরানো হয়। রিং পরানোর পর থেকে নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। আমাদের পক্ষ থেকে বদলি ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এ বছরের ২২ জানুয়ারি গোলাম মোস্তফা তার মাকে হারান। মৃত্যুকালে তিনি ছোট ছোট চার মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে গেছেন। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ছোট মেয়েও এখনো শিশু। তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই।
গোলাম মোস্তফার স্বজনরা জানান, দুদকের চাঁদপুর কার্যালয়ের কোর্ট সহকারী (এএসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তার হার্টে জটিলতা ধরা পড়ে। হার্টে রিং পড়ানো হয়েছিল। রিং পড়ানোর মাস না যেতেই গত ২১ মার্চ তাকে বদলি করা হয় পাবনায়। অসুস্থ অবস্থায় বদলির আদেশে মানসিক চাপ পড়ে যান তিনি। আদেশ প্রত্যাহারে অসুস্থ অবস্থায়ও দুদকের প্রশাসন বিভাগে যোগাযোগ করলেও কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। উল্টো নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এই মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে হলেও দুদক কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে অভিযোগ গোলাম মোস্তফার স্বজনদের।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন যাবৎ হাঁপানি রোগেও ভুগছিলেন। অসুস্থ হওয়ায় গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরে থেকে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন। গত এক মাসে তিনি বেশি অসুস্থ ছিলেন। প্রায় অফিস করতে পারতেন না। বদলির আদেশ হাতে পেয়ে সাম্প্রতিক হার্টের অপারেশন করা রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যান।
মৃত্যুর আগের দিন সহকর্মীদের কাঁধে ভর দিয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অফিস সময় পর্যন্ত বদলি আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। তারপর গত ২৮ মার্চ বিকেলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন ও পরদিন ২৯ মার্চ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে দুদকের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি গোলাম মোস্তফার বদলি সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের জবাব পেতে জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
অন্যদিকে, দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বদলির বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।
আরএম/কেএ