মেট্রোরেল পেছনে রেখে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চত্বরটি এমনিতেই বেশ সাজানো-গোছানো। এখানকার মনোরম পরিবেশ দৃষ্টি কাড়ে সবার। বর্তমানে এই পরিপাটি চত্বরে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই শহীদ মিনারের উচ্চতা ২১ ফুট। মিনারের পেছনে থাকবে ৩০ ফুট উচ্চতার সবুজ দেয়াল। স্টিলের কাঠামোর ওপর লোহার জাল ও তার ওপর চিরহরিৎ পাতাবাহার গাছ দিয়ে এ সবুজ দেয়াল তৈরি করা হবে।
বিজ্ঞাপন
সামনে দাঁড়ালে শহীদ মিনারের পেছনে বাংলাদেশের পতাকা দেখা যাবে। ইতোমধ্যে এই শহীদ মিনার নির্মাণের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই শহীদ মিনারের কাজ আগামী মে মাসের মাঝামাঝিতে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী চত্বর। এখানে দীর্ঘদিন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ও ছিল। সার্বিক দিক বিবেচনায় এটি একটি চমৎকার চত্বর বলেই পরিচিত। এছাড়া আমাদের দেশের নৈসর্গিক একটি দৃশ্য এখানে আছে।
তিনি বলেন, এখানে ভাষা শহীদদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ২৬ মার্চ ও একুশে ফেব্রুয়ারি এবং বিভিন্ন সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমরা করে থাকি। এসব চিন্তা থেকেই গণপূর্তকে দিয়ে ডিজাইন করে তাদের দিয়েই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমি আজ সকালে শহীদ মিনারটি পরিদর্শন করেছি। দেখে ভালো লেগেছে। কারণ মিনারটির পেছনে মেট্রোরেলের দৃশ্য থাকছে। ভাষা শহীদদের সম্মানে এখানে স্থায়ীভাবে এটি তৈরি হচ্ছে। নির্মাণ হয়ে গেলে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো এখানেই করতে পারব।
রোববার (২৫ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, ইতোমধ্যে শহীদ মিনার দৃশ্যমান হয়েছে। লাল ইটের গাঁথুনিতে বাউন্ডারিও দাঁড়িয়ে গেছে। মোট পাঁচটি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। মিনার এখন দৃশ্যমান। কেবল রঙ করা বাকি। সবুজ দেওয়ালের কাঠামোও দাঁড়িয়ে গেছে। এখনও লোহার জাল বসানো বাকি। তাছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মূল ফটক থেকে পেছনের ফটক পর্যন্ত হাঁটার পথ নির্মাণের কাজও চলমান।
শহীদ মিনারটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাইমেক্স ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান তাপস বলেন, জানুয়ারিতে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, মে মাসের মাঝামাঝিতে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এটি একটি বিশেষ প্রকল্প। পরিকল্পনামন্ত্রীর নিজের তদারকিতে কাজটি হচ্ছে। যতদূর আমি জানি, এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কাজের মানও আমরা সেভাবেই নিশ্চিত করছি, যেন এটি শতভাগ সুন্দর হয়। মানের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস আমরা করিনি। এখানে যত উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, দেশের সেরা ব্র্যান্ড থেকে আমরা সেগুলো নিচ্ছি।
তিনি বলেন, মিনারের পেছনে গ্রিন ওয়াল (সবুজ দেয়াল) নির্মাণ করা হচ্ছে। ওটাকে হেভি একটা স্ট্রাকচার বানানো হচ্ছে। গ্রিন ওয়ালটা মূলত স্টিলের স্ট্রাকচার। সেটা মাটি থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার হবে। স্ট্রাকচারের পুরোটার ওপর মোটা তারের একটা নেট দিয়ে দেব। সেটার ওপরে পাতাবাহার লতাগুলো উঠে ঢেকে থাকবে। তার সামনে ও মিনারের পেছনে সাড়ে ৮ ফুটের একটা রাউন্ড আছে। রাউন্ড ও পেছনের গ্রিন ওয়াল, এই দুইয়ে মিলে মনে হবে এটি যেন একটি পতাকা আর সামনে শহীদ মিনার।
জানা গেছে, ম্যাগনেটিক স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে মিনারটি। মিনার চত্বরের বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৬৪ ফুট। তাছাড়া শহীদ মিনারের সামনে হাঁটার রাস্তা থাকবে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। মূল গেট থেকে পেছনের গেট পর্যন্ত হাঁটার রাস্তা করা হবে। এই হাঁটার রাস্তার দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ২৫০ ফুট।
এসআর/আরএইচ