দিনে গরম রাতে শীত, ‘বিরূপ আবহাওয়া’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
গত কিছুদিন রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা কমছে। রাতের শেষদিকে গায়ে জড়াতে হচ্ছে কাঁথা। আবার ভোর পেরিয়ে সকাল হতেই বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। দুপুরের দিকে তাপমাত্রা বেশ উষ্ণ থাকছে আবার বিকেল থেকে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিরূপ এক আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রাজধানীর বাইরের আবহাওয়ায়ও কিছুটা বিরূপ আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় বর্তমানে ১৪ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ এখনো সেখানে শীতকালীন আবহাওয়া বিরাজ করছে। যদিও ওই এলাকায় এখন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিজ্ঞাপন
মার্চ মাসের শুরুতে, বাংলায় ফাল্গুন মাসের শেষ আর চৈত্র মাসের শুরুর দিকে, তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে আবার কমে গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। রাজধানীর অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে তাপমাত্রার এ অস্বাভাবিকতা নিয়ে কথা বলছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়ে আসছিল মার্চ মাসে ঝড়-বৃষ্টি হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় প্রতিদিন কিছু কিছু বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে পাল্টে গেছে রাত-দিনের তাপমাত্রাও।
মার্চে তুলনামূলক কম তাপমাত্রাকে ‘বিরূপ আবহাওয়া’ বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এমন আবহাওয়া অনেকদিন দেখেননি বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চৈত্র মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। সবসময় এটাই দেখা যায়। এখন এর চেয়ে একটু কম আছে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে। আজকেও ২০ এর নিচেই আছে। এপ্রিল মাসের ৫ থেকে ৭ তারিখের দিকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।
তেঁতুলিয়ায় অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেতুলিয়া থেকে হিমালয় কাছে। পাহাড়ি এলাকার আবহাওয়া একটু ভিন্ন থাকে, এটা আমরা সবাই জানি। এই পাশের দার্জিলিংও পাহাড়ি এলাকা। সেখানে এখন তুষারপাতও নাকি হচ্ছে। এর আগে কখনো যেটা হয়নি।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন এদিকে বাতাস ছিল বেশি। তিন চারদিন আগে টানা দুই দিন ঠান্ডা বাতাস ছিল। এরকম বাতাস আমি এর আগে এই সময়টাতে কখনো দেখিনি। তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়। যদিও চৈত্র মাসের এই সময়টাতে এখানে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার কথা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছরই সারা পৃথিবীতে বিরূপ আবহাওয়া আসে। সাম্প্রতিককালে বিরূপ আবহাওয়াটা একটু বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের পরেই মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকার কথা এবং সর্বোচ্চ হওয়ার কথা। সেই প্রেক্ষিতে কিন্তু এটি শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মতো ঘটনা ঘটায় এটি কমে গেছে।
তিনি বলেন, এখন এই অঞ্চলে উত্তরপশ্চিম দিকের বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে ভোর রাতে ঠান্ডার অনুভূতি এবং দিনের বেলায় তাপমাত্রা কম অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই গরম চলে আসবে। এপ্রিলে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে, সেটি কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আবদুল মান্নান বলেন, সাম্প্রতিককালে ‘বিরূপ আবহাওয়া’ বেড়েছে। এটি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন।
এমএইচএন/পিএইচ