২৪ ঘণ্টাই সরগরম থাকে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। দিন নেই, রাত নেই সবসময় ট্রেন যাচ্ছে আসছে। এমনকি মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্তও অনেক ট্রেন এসে পৌঁছায়। এককথায় এখানে দিন-রাতের পার্থক্য করাও বেশ কঠিন।

স্টেশনে এসে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় মধ্যরাতের ট্রেনের যাত্রীদের। বিশেষ করে নারী-শিশুসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের সীমাহীন কষ্ট হয়। কখনো ট্রেনের শিডিউল বিঘ্ন হলে তো কথাই নেই, ঘণ্টার পার ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। একদিকে স্টেশনে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, অন্যদিকে রাতের নগরীতে আছে ছিনতাই-ডাকাতির ভয়। এদিক-সেদিক যাওয়াও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

যাত্রীদের এমন কষ্টের কথা চিন্তা করে স্টেশন চত্বরেই বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রাত কাটানোর এই ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই ছিল। মাঝে কিছুদিন বন্ধ ছিল। এ বছরের জানুয়ারিতে কিছুটা সংস্কার করে এই হোটেল সেবা আবার চালু করা হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে স্টেশনের মূল ভবনেই আবাসিক হোটেলের মতো বিশ্রাম কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষও। কর্তৃপক্ষের দাবি— স্বল্প খরচে এসব কক্ষে রাত্রিযাপন করতে পারবেন যাত্রীরা।

দেশের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনটির প্রশাসনিক ভবনটি তিনতলা। নিচতলা ও দোতলায় স্টেশন থেকে ট্রেন অপারেশনের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দোতলায় রয়েছে রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়। আর তৃতীয় তলায় রয়েছে আবাসিক হোটেল। এটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সেল (বিআরসিটিসি)।

রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পায়ে হেঁটে বা গাড়ি থেকে নেমে টিকিট কাউন্টারের দিকে যেতে হাতের বামে স্টেশনের প্রথম ভবনের নিচে হোটেলটির প্রবেশপথ।

প্রবেশপথের দুই পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথ। গোলাকৃতির বেশ বড় একটি সিঁড়ি বেঁয়ে উঠতে হবে ভবনের তৃতীয় তলায়। উপরে উঠেই দেখা মিলবে— মেঝেতে লালগালিচা ও অভ্যর্থনা টেবিল। সেখানে যাত্রীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে দুজন ম্যানেজার কাজ করেন। তাদের সঙ্গে রয়েছে দুজন সহকর্মীও।

১৬ কক্ষবিশিষ্ট রেলওয়ে আবাসিক হোটেল

রেলওয়ে আবাসিক হোটেলে মোট ১৬টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ শুধুমাত্র হোটেলের কর্মচারীরা ব্যবহার করেন। আর বাকি ১৫টি কক্ষ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ৭টি কক্ষে রয়েছে এসিসহ ফ্যান। আর বাকি ৮টি কক্ষে শুধু ফ্যান রয়েছে।

এসি কক্ষে চারজন থাকতে পারবে; এমন রুম রয়েছে ৫টি। এসব কক্ষের ভাড়া দুই হাজার টাকা। দুজন করে থাকতে পারবেন এমন কক্ষ রয়েছে দুটি। এসব রুমের ভাড়া এক হাজার ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে এসি ছাড়া রুম রয়েছে ৮টি। এগুলোর ভাড়া এক হাজার টাকা করে। প্রতি কক্ষে দুজন করে থাকতে পারবেন।

হোটেলের প্রথমদিকের কক্ষগুলোর জানালা থেকে বাইরের পার্কিং এরিয়া দেখা যায়। বারান্দা থেকে দেখা যায়— টিকিট কাউন্টার এবং প্লাটফর্ম এরিয়া। দ্বিতীয় সারির কক্ষগুলোর জানালা থেকে সরাসরি স্টেশনের প্লাটফর্ম দেখা যায়। বারান্দা থেকে দেখা যায়— কাউন্টার ও শহরতলি প্লাটফর্ম।

রেলওয়ে আবাসিক হোটেলে যেসব সুবিধা থাকছে

হোটেলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে— খাট, টি-টেবিল, সোফা, ড্রেসিং টেবিল, টেলিভিশন ও কাপড় রাখার জায়গা। ওয়াশরুমগুলোতে রয়েছে— বালতি, মগ, হাই-কোমড, বেসিনসহ আয়না। এছাড়া প্রতি অতিথির জন্য দেওয়া হয় সাবান, শ্যাম্পু ও দাঁত মাজার জন্য পেস্ট। খাওয়ার জন্য রয়েছে বিশুদ্ধ পানি।

এছাড়া হোটেলের পক্ষ থেকে ফ্রিতে লন্ড্রি সুবিধাও দেওয়া হয়। নিরাপত্তার জন্য হোটেলে রয়েছে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা। একইসঙ্গে রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেটসহ ওয়াই-ফাই সুবিধা।

হোটেলে রাত্রিযাপনে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র

রেলওয়ে আবাসিক হোটেলে অতিথি হওয়ার জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এই হোটেলে যেকোনো সময় চেক-ইন করা যায়। তবে চেক আউট করতে হয় দুপুর ১২টার মধ্যে। হোটেলে অবস্থানকালে খাবারের জন্য দোতলায় থাকা বিরতি রেস্টুরেন্টের সঙ্গে ইন্টারকম সুবিধা রাখা হয়েছে।

হোটেলের ম্যানেজার মো. শাহীন রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, হোটেলে শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা অতিথিদের বিশুদ্ধ পানি দিয়ে থাকি। এখানে বাজে কোনো লোকের আড্ডা নেই। পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর।

তিনি বলেন, আমরা রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে থাকি। বেশি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম নিয়ে থাকি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি নম্বর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। নম্বরটি হচ্ছে— ০১৩৩০-৫১২০৬৯। কেউ চাইলে ট্রেনে বসেই এই নম্বরে কল করে রুম বুকিং করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই আবাসিক হোটেলটি আগে তৃতীয় একটি পক্ষ ‘নিকুঞ্জ’ নামে পরিচালনা করত। বিশাল অঙ্কের বকেয়া থাকায় ২০২২ সালে রেলওয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়।

অবশেষে এ বছরের (২০২৪) জানুয়ারি মাসে এটি নতুন করে চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সেল’।

এমএইচএন/এমজে