পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে অন্তত আরও চার মাস চাহিদা মেটানো যাবে বলে ধারণা করছেন তারা। 

তবে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়াবে অসাধু ব্যবসায়ীরা—এমন আশঙ্কা ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

এদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও আগের চুক্তি অনুযায়ী ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। 

তিনি বলেন, ‘এই পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই ট্রেনে চড়েছে, যা দর্শনা রুট দিয়ে দুই বা তিন দিনের মধ্যে পৌঁছাবে।’

রোববার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘প্রয়োজনীয় জিনিসের দামের উপর সিন্ডিকেট এবং প্রতিযোগিতার প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘নতুন করে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামে এর প্রভাব পড়বে না। কেননা, বর্তমানে বাজারে যা পেঁয়াজ সরবরাহ আছে; তা দিয়ে চট্টগ্রামের জন্য আগামী তিন থেকে চার মাস চলবে। তবে দামের কথা চিন্তা করলে হয়তো নতুন করে ১০ টাকা করে বাড়তে পারে। তবে সেটি আগের (বেশি) দামে যাবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে মেহেরপুরের (দেশি) পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ফরিদপুরের (দেশি) পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরাতেও দাম কমেছে এসব পেঁয়াজের। অথচ গত সপ্তাহে (১৮ মার্চ) এসব পেঁয়াজের দাম ছিল অর্ধেকের বেশি। যার মধ্যে দেশি (মেহেরপুর-ফরিদপুর) পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। 

তবে আবারও আগের দামের কাছাকাছি ফিরে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত সপ্তাহে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে হু হু করতে কমতে থাকে দাম। বর্তমানে যে দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তা বলতে গেলে লোকসান দিয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন বাজারে যেসব ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে তা চোরাই পথে আসা। ভারত থেকে বৈধ পথে পেঁয়াজ আসার খবরে দেশি পেঁয়াজ থেকে শুরু করে ভারতীয় পেঁয়াজ সব ধরনেরই দাম কমে গেছে। এখন তো শুনছি নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। তাহলে যেভাবে পেঁয়াজের দাম কমেছিল; সেভাবে আবারও আগের দামে ফিরে যাবে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া খুচরা পর্যায়েও পেঁয়াজের দাম নতুন করে প্রভাব পড়বে।’

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ আসার খবরে গত সপ্তাহে দাম একদম কমে গিয়েছিল। ভারতীয় যে পেঁয়াজ বাজারে আছে তা চোরাই পথে এসেছে। সেগুলো পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর মেহেরপুরের (দেশি) পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ফরিদপুরের (দেশি) পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

বিশ্বে ভারতের সবচেয়ে বড় পেয়াঁজ রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০২৩ সালে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে ২.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে ভারত।

আরএমএন/এমএসএ