জবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানি
মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কার্যালয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন একই বিভাগের এক ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম। গত সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে এসে ওই ছাত্রী এ অভিযোগ করার পর বুধবার (২০ মার্চ) দুই শিক্ষককে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
এদিন দুপুর ২টার দিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের কার্যালয়ে অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোগকারী ছাত্রী ও অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে বলে ডিবি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ছাত্রীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা দুই শিক্ষক হলেন মূল অভিযুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন ও একই বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম। এছাড়াও ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদেরও ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন
গত সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে এসে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন। অভিযোগ দেওয়া শেষে বিকেলে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য শূন্য নম্বর দিয়ে ফেইল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেইল করানো হয়।
২০২১ সালে আবু সাহেদ ইমন তাকে যৌন হেনস্তা করেন। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে তার জীবনে নেমে আসে নানা নির্যাতনের খড়্গ। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানেই অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গও আসে। গণমাধ্যমে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ফারজানা মীম বলেন, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে এবং হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।
অভিযোগ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে এবং শূন্য নম্বরসহ ভাইভায় ফেইল করিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা বায়বীয় অভিযোগ। সে পরীক্ষায় অংশই নেয়নি এবং ভাইভায় একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি। তাই সে ফেল করেছে। এর আগেও বিভিন্ন টিচারের কোর্সে সে ফেইল করেছে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে গেছেন রাষ্ট্রপতির কাছেও। নিজ বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকির প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বরাবর এ আবেদন করেন ওই ছাত্রী।
অভিযোগকারী ছাত্রী মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বঙ্গভবনে আবেদনটি জমা দিয়ে আসেন। আবেদন গ্রহণের একটি অনুলিপি ঢাকা পোস্টের কাছে আছে। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনে তিনি যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের বিচার চেয়েছেন।
জেইউ/জেডএস