গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমের যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার টিম কাজ করছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গেও তারা (সাইবার টিম) যোগাযোগ রাখছে। আর বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ডিবি কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিবিপ্রধান বলেন, ওই ছাত্রীর যে সমস্যা সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমাধান করতে পারবে না। আমরা ভুক্তভোগী ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছি।

তিনি বলেন, তাকে বারবার কেন ফেল করানো হয়েছে বা কেন ৬ বছরেও পাস করতে পারেননি তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে বের করবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে একমত বলেও জানান তিনি।

এর আগে, গতকাল সোমবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন কাজী ফারজানা মীম। তাকে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ওই শিক্ষক জ্বালালের গল্প সিনেমার নির্মাতা। তিনি চ্যানেল আইয়ের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

অভিযোগ দেওয়া শেষে বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাজী ফারজানা মীম বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইন্যাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।

২০২১ সালে আবু সাহেদ ইমন তাকে যৌন হেনস্তা করেন। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে তার জীবনে নেমে আসে নানা নির্যাতনের খড়্গ। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানেই অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গও আসে। গণমাধ্যমে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

ফারজানা মীম বলেন, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে এবং হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।

অভিযোগ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে এবং শূন্য নম্বরসহ ভাইভায় ফেইল করিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা বায়বীয় অভিযোগ। সে পরীক্ষায় অংশই নেয়নি এবং ভাইভায় একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি। তাই সে ফেল করেছে। এর আগেও বিভিন্ন টিচারের কোর্সে সে ফেইল করেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন বলেন, ঠিক আছে ডিবি তাকে (ফারজানা মীম) নিরাপত্তা দিক, আমরা দোয়া করি সে নিরাপত্তা পাক। সে অনিরাপত্তায় থাকবে শিক্ষক হিসেবে এমন কোনো কাজ করিনি। 

সে মিথ্যা একটা ঘটনাকে অবন্তিকার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরএইচটি/এমএ