রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের হাতিরপুল কাঁচাবাজার সংলগ্ন ৬ তলাবিশিষ্ট রাজ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। কারণ, ভবনটিতে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নেই, ছিল না ফায়ার এক্সিটও। দেওয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে ফায়ার সার্ভিস। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির সামনে থেকে ছোট মনে হলেও পেছনে অনেক লম্বা। পুরো ছয়তলা ভবনের সামনের অংশ ব্যবহার করা হচ্ছিল কমার্শিয়াল হিসেবে। আর ভবনের পেছনের অংশ ব্যবহার করা হচ্ছিল আবাসিক হিসেবে। দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগলেও ফায়ার সার্ভিসকে ভেতরে ঢোকার পথ খুঁজতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়। 

ভবনটির কমার্শিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন আমিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তাকে খুঁজেও ঘটনাস্থলে পায়নি ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে ভবনের একটি অংশ ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।

ভবনটির চারতলার বাসিন্দা সোহেলুর রহমান। তিনি নিজে একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। আগুনের সময় তিনি ছিলেন না বাসায়। তবে তার পুরো পরিবারের সদস্যরা আগুনের সময় ভেতরে অবস্থান করছিলেন।

সোহেলুর রহমানের ছেলে ফিদাক রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনের খবরে আমরা ছাদে অবস্থান নিতে যাই। কিন্তু সেখানে কেচি গেট আটকা ছিল। বাধ্য হয়ে সেটি লাথি দিয়ে ভেঙে আমরা ছাদে অবস্থান করি এবং চিৎকার করে আমাদের উদ্ধার করার কথা জানাই৷ পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস আমাদের উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, ভবনটির একেক ফ্লোরের মালিক একাধিক বলে আমি জানি। তবে কমার্শিয়াল হিসেবে ভবনের পুরো সামনের অংশটি ব্যবহার করা হচ্ছিল। বলতে পারেন ভবনের সামনের অংশটি পুরোটাই গোডাউন। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আগুন লেগেছিল। এটি মূলতঃ একটি কার্পেটের গোডাউন। রাবারের যে কার্পেটগুলো আছে, সেগুলো এখানে ভরপুর মজুদ রয়েছে। একই সঙ্গে এখানে কাপড়ও আছে। 

তিনি বলেন, এখানে কোনো ভেন্টিলেশন সিস্টেম নেই। আমরা দুই পাশ দিয়ে দেওয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছি। আগুনের সূত্র বের করতেই সময় লেগেছে। কারণ ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা ছিল না। 

আগুনে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তসাপেক্ষে বিষয়টি বলা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে আগুন লাগার কারণও তদন্ত করে বলা সম্ভব। আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করার পর কী কারণে আগুন লেগেছে, সেটি আমরা বের করব।

তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের প্রথম কাজ হচ্ছে একটি ভবনে আগুন লাগার পর সেটি নির্বাপণ করা। আর এতে কি সমস্যা আছে বা না আছে, সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বের করবেন।

মো. আনোয়ারুল হক জানান, ভবনটি অনেক লম্বা; সামনে কমার্শিয়াল স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বোঝা যাচ্ছে। পেছনের অংশে অনেকগুলো ফ্ল্যাট, যেখানে একটি পরিবার ছিল বলে আমার জেনেছি। যাদেরকে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এখানে ফায়ার এক্সিট ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, এত বড় একটি ভবন অথচ ফায়ার এক্সিট না থাকাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এখানে অনেক মানুষ থাকলে হয়ত হতাহত বেশি হতে পারত।

জেইউ/এমজে