দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে ঢাকায় আসা মানুষদের টার্গেট করে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি রিকশাচালকের ছদ্মবেশে যাত্রী তুলে নিজেদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশির নামে ছিনতাই করত।

সম্প্রতি রিকশাযোগে কমলাপুর থেকে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় যাওয়ার পথে এক ব্যবসায়ী এ চক্রের কবলে পড়ে এক লাখ টাকা খোয়ান। এই ঘটনায় রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে নেমে রিকশাচালকের ছদ্মবেশ ও পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহজাহানপুর থানা পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ছিনতাই চক্রটি কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে। টার্গেট করা ব্যক্তিকে রিকশায় তুলে নানা কৌশলে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশির নামে ছিনতাই করত তারা।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, চক্রের মূল হোতা দেলোয়ার হোসেন (৪০) ও তার সহযোগী কামরুজ্জামান (৫০), দুই রিকশাচালক জাকির হোসেন ওরফে বড় জাকির (৪৫) ও জাকির হোসেন ওরফে ছোট জাকির (২৫)।

বুধবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর বাড্ডা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ছিনতাই করা ৪০ হাজার টাকা ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুটি রিকশা উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা এলাকার ব্যবসায়ী সামাদ আলী বিশ্বাস ঢাকা থেকে কাপড় কিনে নিজ এলাকায় বিক্রি করেন। ঈদ সামনে রেখে সামাদ আলী তার ছেলে সাইদুর রহমানকে নিয়ে গত ৫ মার্চ ঢাকায় আসেন। তারা চুয়াডাঙ্গা থেকে ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুরে নামেন। এরপর বঙ্গবাজার যাওয়ার জন্য একটি রিকশা ভাড়া নেন। রিকশাচালক বঙ্গবাজার না গিয়ে পথ বদলে শাহজাহানপুর চলে আসে।

এ সময়ে তিন ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের গতিরোধ করেন। রিকশা থেকে নামিয়ে পিতা-পুত্রকে তল্লাশি চালিয়ে সামাদ আলীর পকেট থেকে নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময়ে কোনো শব্দ করলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে শাহজাহানপুর থানায় বাদী হয়ে একটি ছিনতাই মামলা করেন ব্যবসায়ী সামাদ। মামলার পরে তদন্তে নেমে শাহজাহানপুর খিলগাঁও, আবুল হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৫০টিরও বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছিনতাই চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৫ মার্চ সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে ভুক্তভোগী সামাদ ও তার ছেলে রিকশায় করে উত্তর শাহজাহানপুর সড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনজন মিলে রিকশার গতিরোধ করেন। পরবর্তীতে তারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে রিকশা থেকে নামিয়ে তল্লাশির নামে পকেটে থাকা এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর দুটি রিকশায় করে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে ১ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে আত্মগোপনে চলে যায়।

পরবর্তীতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চক্রের দুই রিকশা চালক বড় জাকির ও ছোট জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের মূল হোতা দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগী কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি হায়াত আরও বলেন, এই চক্রটি রাজধানী বিভিন্ন বাস-ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে রিকশা চালকের ছদ্মবেশে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে ওত পেতে থাকে। এরপর রিকশা যাত্রী তুলে গন্তব্যে না নিয়ে নিজেদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সর্বস্ব লুটে নিত।

তিনি আরও বলেন, দেলোয়ারের নামে ৪টি মামলা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

জেইউ/এসকেডি