ইফতারের খেজুরও নাগালের বাইরে, কেজিতে বেড়েছে ৫শ টাকা পর্যন্ত
এক মাস রোজা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রমজানের অন্যতম আচার ইফতারের প্রধান অনুসঙ্গ খেজুর। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি তাই খেজুর কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুরের দাম অনেক বেশি। বাড়তি দামের কারণে খেজুর এবার নিম্ন আয়ের মানুষের প্রায় নাগালের বাইরে চলে গেছে। প্রয়োজনীয় পরিমাণ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও।
রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও পুরানা পল্টনে খেজুরের দোকানে ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
গত বছরের তুলনায় এ বছর কেজিপ্রতি মানভেদে খেজুরের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে খেজুরের বাজারে এমন আগুন বলে মনে করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর মাঝারি মানের কামরাঙ্গা মরিয়ম খেজুর কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিয়ম কেজিপ্রতি ৮৫০ টাকা ও ইরানি মরিয়ম কেজিপ্রতি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে তিউনেশিয়ান খেজুর প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সৌদি আম্বার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আজোয়া (ছোট) খেজুর প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, মদিনার সুগাই খেজুর ১২০০ টাকা ও মেগজল আম্বার খেজুর প্রতি কেজি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন
এ ছাড়া নাখাল মরিয়ম খেজুর ৫৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ৫০০ টাকা, সুকাই খেজুর ৪৫০ টাকা, লিবিয়ান খেজুর ৫০০ টাকা, বরই খেজুর ৫০০ টাকা, ঢালাকাচা খেজুর ৫২০ টাকা এবং দাবাস খেজুর ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে এসব খেজুর গত বছরের চেয়ে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
২০ বছর ধরে খেজুর বিক্রি করছেন সেলিম হাওলাদার। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশে খেজুরের দাম এত বেশি। গত বছর যেসব খেজুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ বছর সেসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, আমাদের তো করার কিছু নেই। আমরা অতিরিক্ত দামে খেজুর কিনে অল্প লাভে বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারে খেজুর ব্যবসায়ীদের বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। তারাই মূলত দাম নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া দেশে ডলারের সমস্যা তো আছেই।
মাহবুব মিয়া নামে আরেক বিক্রেতা জানান, প্রতি কার্টনে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা বেশি দিয়ে খেজুর কিনতে হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই অতিরিক্ত দাম ৩ হাজারের বেশিও পড়ছে। গত রমজানেও মানুষ খেজুর কিনতে পেরেছে কিন্তু এ বছর আর খেজুর খাওয়ার উপায় নেই। আমরা ছোট ব্যবসায়ী, অল্প কিনি, অল্প বিক্রি করি। বাজারের নিয়ন্ত্রণ তো আমাদের হাতে নেই।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ইদ্রিস আলম এসেছিলেন খেজুর কিনতে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কিছুই খাওয়ার উপায় নেই। বাজারে সবকিছুতেই আগুন। মানুষ রমজানে যে একটু শান্তিতে ইফতার করবে সে উপায়ও নেই। ১৫-১৬শ টাকা কেজি। ৫০০ টাকায় কিছু খেজুর বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো অর্ধেক পচা। একটু ভালো মানের খেজুর কিনতে গেলেই গুনতে হচ্ছে ১২শ থেকে ২৫শ টাকা।
আবদুল্লাহিল কাফি নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সবই তো জানেন। মন্ত্রী বরই খেতে বলেছেন, সেটাই করতে হবে। খেজুর আর আমাদের রিজিকে নেই। সবকিছুই লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। আমার বাচ্চাটা ছোট, সে মাঝে মাঝে রোজা রাখে। রমজানে সে খেজুর চায়। বাধ্য হয়ে খেজুর কিনতে এসেছি। কিছু বলার নেই, দেখারও কেউ নেই।
ইউনুস নামে আরেক ক্রেতা বলেন, দাম তো বাড়ছেই। আমরাও কিনে খাচ্ছি। কোনোকিছুরই আর দাম কমে না। আমরাও কেন জানি এগুলো মেনে নিয়েই চলছি। রমজান উপলক্ষ্যে অন্তত খেজুরের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত ছিল।
এমএম/এসএসএইচ