ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় গাড়িমুক্ত সড়ক উদ্বোধন করা হয়েছে।

এসময় বক্তারা বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের জনগণ মাঠ-পার্কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঘরের কাছে হাঁটা দূরত্বে মাঠ-পার্ক না থাকলে মানুষ দূরবর্তী মাঠ-পার্কে যেতে আগ্রহী হন না। অভিভাবকরাও দূরবর্তী মাঠ-পার্কে শিশুদের যেতে দিতে উৎসাহী হন না। এ পরিস্থিতিতে ঘরের কাছে কম ব্যস্ত সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার আয়োজন একটি সময়োপযোগী সমাধান।

শুক্রবার (৮ মার্চ) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৬নং ওয়ার্ডের সার্বিক সহযোগিতায় হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা, অক্ষয় দাস লেন (কাঠ বাগিচা) এলাকাবাসী, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে অক্ষয় দাস লেন (কাঠ বাগিচা) গেন্ডারিয়া সড়কে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনে উদ্বোধন করা হয়।

সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনে দাবা-লুডু-ক্যারাম-দড়ি লাফ-ব্যাডমিন্টন, ছবি আঁকা, কারুকাজ শিখানোসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র শহীদ উল্লাহ্ মিনু বলেন, ৪৬নং ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক না থাকায় এলাকাবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষত মেয়ে শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে একেবারেই বঞ্চিত। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে ঘরের কাছে হাঁটা দূরত্বে খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মেয়ে শিশু-কিশোরীরাও উপকৃত হবে। ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ। ওয়ার্ড ভিত্তিক বা এলাকা ভিত্তিক এ ধরনের খেলাধুলার আয়োজন এলাকাবাসীর জন্য খুবই কার্যকরী।

প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৮৬ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু স্মার্ট ফোনে আসক্ত। খেলার মাঠের অভাবে ৫২ শতাংশ শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে। আমরা শিশুদের দোষারোপ করি যে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্ত, প্রকৃতপক্ষে আমরাই তাদের মাঠ-পার্কে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারিনি। গাড়িমুক্ত সড়কের আয়োজনের মাধ্যমে শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। এলাকার বাসিন্দারা যদি সচেষ্ট হয়, তাহলে অন্যান্য এলাকায়ও এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নগরব্যাপী আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে সরকারিভাবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন হয়ে আসছে। বর্তমানে মোহাম্মাদীয়া হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী বাবর রোড ও খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজিত হচ্ছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির বিভিন্ন অসুবিধা, যেমন– যানজট, দূষণ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি বিবেচনায়, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতি ১২,৫০০ মানুষের জন্য পার্কের জন্য ১ একর এবং খেলার মাঠের জন্য ২ একর জায়গা প্রয়োজন। ঢাকা শহরের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষের খেলার মাঠে প্রবেশগম্যতা রয়েছে, বাকি ৮৪ শতাংশ মানুষ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সড়ক আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর। কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পার্কিং সুবিধা দিয়ে এ গণপরিসর থেকে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছি। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে সড়কে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তাটিই আমরা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এ ধরনের কার্যক্রম শিশুদের বিকাশে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।

এএসএস/এসএসএইচ