আলালের ঘরের দুলালরাও জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ে : হারুন
রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান, উত্তরা ও মতিঝিল এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে গত দুদিনে কিশোর গ্যাংয়ের ৭৫ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, মাহফিল-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে এক হচ্ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যা। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে বর্তমানে ধনীর সন্তানরাও জড়াচ্ছে। তারা মারামারিসহ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর কিশোর গ্যাং কালচারকে স্থানীয় কাউন্সিলর-কথিত বড়ভাইরা প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কিশোর গ্যাং একটি ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। তাদের দৌড়াত্মের কারণে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাই, ইভটিজিং, হুমকি দেওয়া, স্কুল কলেজ ছাত্রীদের ভয় দেখানোসহ বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এই কাজগুলো তারা দলবদ্ধ হয়ে করে।
তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা নামে প্রভাব বিস্তার করে আসছে তারা। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ইয়াং স্টার, বিগবস, ডিস্কো বয়েজ, বন্ধু মহল, শীল বিষু গ্যাং, পারভেজ গ্রুপ, রুস্তম গ্রুপ, ইয়াং স্টার গ্রুপ, নাইন এমএম গ্রুপ, নাইন স্টার গ্রুপ। কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছে।
হারুন বলেন, কতিপয় বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে তারা। এমনকি তারা চুরি ছিনতাই করে আসছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গত দুই বছরে ৩৪ জন কিশোর নিহত হয়েছে।
ডিবি প্রধান বলেন, আমরা এক সময়ে মনে করতাম ভাসমান ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনীদের আলালের ঘরের দুলালরাও কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের পোশাক, চুলের কাটিং চলাফেরা সবই ভীতিকর।
এই সব ধনীর সন্তানরা প্রথমে মাদক সেবন, পরবর্তীতে মাদক বিক্রিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তারা এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক বড় ভাই আবার কখনো কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে থেকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের ছত্রছায়ার অভিযোগ রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দুই দিন ৭৫ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সবাই কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত থাকার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন
কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এখন সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এসব কিশোররা স্কুলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদক সেবনের মতো উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছে। আমরা গোয়েন্দা পুলিশ এটি নিয়ে কাজ করছি।
ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, অভিভাবকদের উচিত তার সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে তার খোঁজ রাখা। পাশাপাশি মা-বাবার উচিত সন্তানদের সময় দেওয়া। আসলে গ্রেপ্তার করে কিশোর গ্যাং দমন করা যাবে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পরিবারের সদস্যদের কিশোর গ্যাং দমনে এগিয়ে আসতে হবে। তবে কিশোর গ্যাং বিরোধী ধারাবাহিক অভিযান চলবে। এই বিষয়ে কেউ সুপারিশ নিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয় দেওয়া বড় ভাইদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। এসব নাম তদন্ত করে আমরা দেখবো, কারা কারা কিশোর গ্যাং সদস্যদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। তবে আমি মনে করি এসব কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপরাধ করার তথ্য তো কান্সিলররা জানে।
হারুন বলেন, মাহফিল-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের নামে এক হচ্ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যা। নানা গ্রুপের সদস্যরা বড় বা রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করে। মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে। কিশোর গ্যাংয়ের এমন দৌড়াত্মের কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
জেইউ/পিএইচ