আঞ্জুমান আরা বেগম। একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। সম্প্রতি স্থানীয় রাজনীতি সূত্রে নারী কোটায় সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে শুরু করেছিলেন দৌড়ঝাঁপ। তদবির করতে গিয়ে পড়েন ভুয়া লিকুর খপ্পরে। খোয়ালেন ৬২ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু পরিচয়ে চাকরির তদবিরকারী প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার ও প্রতারণায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ভুয়া লিকুর আসল নাম ইয়াসির আরাফাত (৩০)। একই ঘটনায় মো. আনিস নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার ইয়াসির আরাফাত ও মো. আনিস প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও সরকারি অন্যান্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ফোন করে তার মনোনীত ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার জন্য তদবির করাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ফোন করে চিকিৎসা ফি কমানো ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের রোগী দেখার সিরিয়াল দেওয়ার কাজ করে আসছিলেন। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আগেও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর পরিচয় প্রদান করে বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন বাণিজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কন্ট্রাক্টরি, চাকরি দেওয়া, সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আবার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত এপিএস-২ পরিচয়ে প্রতারণা করা ভুয়া এ লিকুকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। সে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে।

ভুক্তভোগী এক মনোনয়নপ্রত্যাশীর অভিযোগ তুলে ধরে ডিবিপ্রধান বলেন, আঞ্জুমান আরা বেগম তিনি একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি স্থানীয় রাজনীতি করেন। তার ইচ্ছা তিনি নারী কোটায় এমপি হবেন। সেজন্য তিনি আনিস নামে একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি (আনিস) বলেন, আপা আপনার সঙ্গে কি লিকুর কোনো যোগাযোগ বা ম্যাসেজ আসেনি? হ্যাঁ ম্যাসেজ তো আসছে। তাতে লেখা ছিল-দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া শেষ হয়ে যাবে। দ্রুত ৬২ লাখ টাকা পাঠান। প্রথমে ১২ লাখ টাকা দিতে হবে উন্নয়ন ফান্ডে। বাকি টাকা দিতে হবে অ্যাকাউন্টে।

আনিস তখন বলেন, ভাই তো টাকা দিতে বলেছে, টাকা দেন। সুমন ও আনিসের নামে দুজনের মাধ্যমে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ৬২ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর আজ পর্যন্ত ওই নম্বর খোলা পাওয়া যায়নি।

হারুন বলেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ পরিচয়ে প্রতারণা করা ভুয়া লিকুও বিভিন্ন লোকজনকে টেলিফোন করেন। বলেন, আমি লিকু বলছি, তাকে চাকরিটা দিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে। এভাবে কিন্তু লিকুর পরিচয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিও হয়ে গেছে একজনের। এভাবে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ব্যক্তিকে টেলিফোন করে তদবির করেছেন। লিকুর নাম ব্যবহার করে বিভিন্নজনের কাজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। লিকু পরিচয় দেওয়া দুই প্রতারক ভুয়া লিকুকে গ্রেপ্তার করেছি।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু পরিচয় দিয়ে এই প্রতারণার কাজটি করে আসছিলেন। তাদের বক্তব্যে আরও কিছু ভুয়া লিকু রয়েছে। যারা দাপ্তরিক তদবির করেন।

হারুন বলেন, এর আগেও লিকুর নাম ব্যবহার করে একটা জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এক কোটি টাকা দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন পাবার কথা বলে। আমরা সে প্রতারককেও গ্রেপ্তার করেছি। এভাবে অসংখ্য প্রতারক গাজী লিকু নাম ধারণ করে প্রতারক গ্রেপ্তার করছেন।

একদিনের মধ্যে ৬২ লাখ টাকা তিনি কোথায় পেলেন? জানতে চাইলে হারুন বলেন, সেটা তো তার ব্যাপার। ভাই ছেলে মেয়ে আত্মীয়-স্বজন তো আছেই। নানাভাবেই তো এ টাকা ম্যানেজ করতে পারে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তদবিরের ক্ষেত্রে চাকরি হবার আগেই টাকা নিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২, পিএস বা এপিএস পরিচয়ে এর আগেও আমরা ভুয়া লোকজনদের গ্রেপ্তার করেছি। অনেক নাম ধারণ করে প্রতারণা করেছে। কিছু দিন বন্ধ ছিল। নির্বাচনের পর আবার এটা শুরু হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। 

এই চক্রের ব্যাপারে টাকা লেনদেন কিংবা তদবির করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

জেইউ/এমএ