ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভর্তিসহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায় এবং কমিশন লাভের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ৫৮ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সোমবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৬৫ জন দালালকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল। পরে যাচাই-বাছাই শেষে সাতজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকি ৫৮ জনকে বিভিন্নভাবে সাজা দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম।

পরে বিকেল ৩টায় ঢামেক হাসপাতালের বাগান গেটে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এখান থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া, সিট পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা এবং বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে মাদকসেবীদের ধরে ব্লাড নিয়ে বিক্রির তথ্য পেয়েছি। আমরা এখানে একমাস ধরে তাদের গতিবিধি এবং ভিডিওসহ তথ্য সংগ্রহ করেছি। গ্রেপ্তারদের তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬৫ জনকে আটক করি এবং যাচাই-বাছাই শেষে সাতজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৫৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম। আমরা আজকে স্বল্প সংখ্যক দালালকে ধরতে পেরেছি। এই অভিযান চলমান থাকবে। এখান থেকে যেসব হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া হয়, সেসব হাসপাতালেও অভিযান চালানো হবে। 

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মেডিকেলে এসব দালাল চক্রের বিশাল বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ যারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত, তাদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান থাকবে। এখানে প্রায় দেড়শ থেকে ২০০ জনের মতো দালাল রয়েছে। এদের সাজা দিলে জেল খেটে আসার পর তারা আবারও সেই একই কাজই করবে। এটি একটি চলমান বিষয়, এটিকে এত সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

জানা গেছে, দালালদের মধ্যে মো. শাহিন শিকদারকে (২৬) এক মাস, মো. জিয়ারুলকে (২৯) এক মাস, মো. রিয়াজকে (২৪) এক মাস, মো. সেন্টুকে (৪০) এক মাস, মো. মাসুদকে (৩০) এক মাস, মো. মানিককে (৩৬) এক মাস, শুভ্র চন্দ্র দাসকে (২৩) এক মাস, মো. রবিউলকে (২০) এক মাস, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (৫০) এক মাস, মো. ফুরকানকে (৩২) ১৫ দিন, মো. নজরুল ইসলামকে (৪০) এক মাস, মো. রুবেল আহমেদকে (২৭) ১৫ দিন, মো. সুমন হোসেনকে (৩৪) এক মাস, মো. কামালকে (৩৫) এক মাস, হানিফ মিয়া পাপ্পুকে (৩৫) এক মাস, মো. জুয়েল মিয়াকে (২৫) ১৫ দিন, নূর ইসলাম হাওলাদারকে (৫৫) সাত দিন, আনোয়ার হোসেনকে (৪৫) ১৫ দিন, মো. নাছিম মিয়াকে (২৭) ১৫ দিন, মো. আশিকুর রহমান আশিককে (২৮), সুমন হাসান অভিকে (২৪) ১৫ দিন সাজা দেওয়া হয়।

এছাড়া মো. আনোয়ার হোসেন মানিককে (৪০) ১৫ দিন, মো. আব্দুর রহিমকে (২৩) সাত দিন, মো. শাকিল হোসেনকে (২৪) এক মাস, মো. রাজু আহমেদকে (২৮) এক মাস, মো. আল-আমিনকে (৩২) এক মাস, মো. রিদয় হোসেনকে (২৭) এক মাস, মো. রমজানকে (২৪) ১৫ দিন, মো. মনিরকে (২৪) ১৫ দিন, মো. নজরুল ইসলাম বাবুকে এক মাস, মো. অলিল (২৭) ১৫ দিন, মো. মুন্নাকে (৩৯) ১৫ দিন, মো. নুরুল আমিনকে (৩৮) ১৫ দিন, মো. বাদশাকে (২০)  এক মাস, মো. নিরাজ উদ্দিন (২২) সাত দিন, মো. সিয়াম (২৪) ১৫ দিন, মো. শাহিন (৩০) এক মাস, মো. সিফাত (২০) ১৫ দিন, মো. শাকিলকে (১৮) ১৫ দিন, মো. ওমায়েরকে (২৬) ১৫ দিন, মো. সায়মনকে (৩০) এক মাস, মাসুমকে (৩২) এক মাস, তৈহিদকে (৪২) এক মাস, নাঈমকে (২৭) ১৫ দিন, সোহেলকে (৩০) ১৫ দিন, রেজাউলকে (৪৬) ১৫ দিন, রতনকে (২৭) এক মাস, জাকির হোসেনকে (৪৮) এক মাস, শফিকুলকে (৩৮) এক মাস, শফিককে (৩৮) এক মাস, রাজনকে ১৫ দিন, জহির (৩২) এক মাস, বিল্পবকে (২৮) ১৫ দিন, ফরিদকে (৫৫) এক মাস, আরমানকে (১৯) এক মাস, খোকন আলমকে (৩৩) এক মাস, খুরশিদ মোশারফকে (৬০) এক মাস, নাঈম উদ্দিন সামিরকে (২১) এক মাস সাজা দেওয়া হয়।

এসএএ/কেএ