রাজধানীতে গত ১০ বছরে ২৬৯ জনের মৃত্যুর দায় রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস কেউই এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ নামক একটি সংগঠন।

সোমবার (৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের উদ্যোগে রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রাজউক ,সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ভবন মালিক ও অসৎ ব্যবসায়ীদের শাস্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজধানীতে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। সড়কে নিরাপত্তা নেই, হোটেল-রেস্টুরেন্টে নিরাপত্তা নেই, বাসস্থানে নিরাপত্তা নেই। এমনকি ইন্টারনেটেও নিরাপত্তা নেই। চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। এত সকল অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল শত শত মানুষের মৃত্যু হলো, হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আহত হয়ে বেঁচে রইল অথচ এখন পর্যন্ত রাজউক, সিটি কর্পোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা হলো না। এ সকল প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিনিয়ত যে দুর্ঘটনা ঘটছে তার দায়দায়িত্ব রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস এড়াতে পারে না। অগ্নিকাণ্ডের  এ দায়দায়িত্ব নিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি জানাই।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে শুধু রাজধানীতেই মৃত্যু হয়েছে ২৬৯ জনের। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় ১২৪ জনের, আগুনে পুড়ে যায় ১২৩টি বাড়িঘর। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় ৭১ জনের। একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ২৭ জন, আহত হয়েছিলেন ৭০ জন। ২০২১ সালের ২৭ জুন মগবাজারে ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালের মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেন ২ জন, আহত হন প্রায় অর্ধশত। তাছাড়া সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হন। আর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০৫ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও ছোট-বড় মিলিয়ে আরও বহু ধরনের অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। আর এ সকল অগ্নিকাণ্ডে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রাজউক পরবর্তীতে সাফাই গাইতে থাকে যে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছিল না বা নির্মাণ হয়নি। কিন্তু আমরা মনে করি এই প্রতিষ্ঠানের পিয়ন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই অসৎ দুর্নীতিবাজ। এদের দায়িত্বের অবহেলার কারণে আজ নাগরিক জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অথচ এখন পর্যন্ত এদের কারোর বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন তাদের ব্যবসা করার জন্য বৈধ লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। তারা কীসের ভিত্তিতে লাইসেন্স প্রদান করল আর ব্যবসা কীভাবে পরিচালিত হলো তার দায়ভার কোনোভাবেই সিটি কর্পোরেশন এড়াতে পারে না। 

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স ছাড়া হোটেল রেস্টুরেন্ট, গুদাম, বাণিজ্যিক ভবন পরিচালিত হওয়ার কথা না। অথচ পরবর্তীতে তারা বলেন পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং নেই বা বিভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। তাহলে সরকার তাদের কেন রেখেছে? জনগণের পয়সায় তাদের বেতন কেন দেওয়া হয়? অন্যদিকে ভ্যাট কাস্টমস এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে রাজস্ব আদায় করল। এর জবাব কে দেবে?

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন  সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. খন্দকার জুয়েল, কোষাধক্ষ্য লায়ন শ্যামল সাব্বির, লায়ন নুরুজ্জামান হীরা, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর হোসেন ঈসা, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের চেয়ারম্যান মো. জলিল প্রমুখ।

এএসএস/এনএফ