প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে রমজানকে সামনে রেখে যেকোনো ধরনের খাদ্য মজুত ও ভেজালের বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তা সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে।’

রোববার (৩ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থাপনা নির্মাণে যেন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধুমাত্র যেখানে সিটি কর্পোরেশন আছে সেখানেই নয়, সার্বজনীনভাবে প্রত্যেক জায়গায়ই এই বিষয়টা মানতে হবে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা এগুলো রেখেই নির্মাণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি রোডের দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে দ্রুত ছুটে যাওয়ায় এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় ঢাকা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

তিন ফসলি আবাদি জমি বাড়িঘর বা শিল্প-কারখানাসহ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমিকে রক্ষা করতে হবে’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন দেশও রয়েছে যেখানে মূল্যস্ফীতি ৪০ শতাংশে উঠে গেছে। বাংলাদেশেও এর থেকে দূরে নয়, যদিও বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু তারপরও সমস্যা রয়ে গেছে। আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের বাজার পরিস্থিতি কেমন রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস আসছে। এ সময় কিছু কিছু ব্যবসায়ী সব সময় মজুতদারি করে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে, কেননা এটি আমাদের আশু করণীয় কাজ।

তিনি বলেন, ‘কোথাও যেন ভোক্তাদের কোনোরকম হয়রানির শিকার হতে না হয়। আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, আর এটা যে আমরা করতে পারি সেটা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছি। সেদিকে একটু নজর দেয়া একান্তভাবে দরকার’।

শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরবরাহ। সেটা নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে। পণ্য পচিয়ে ফেলবে তবু বাজারে ছাড়বে না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

তিনি বলেন, ‘রমজান মাসকে সামনে রেখেই এ কথাগুলো আমি সবার আগে বললাম। যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যথাযথভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে’।

তিনি খাদ্যে ভেজাল দেওয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোজা এলেই এই সমস্যাগুলো বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়াও বক্তব্য রাখেন।

বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও গাইবান্ধার ডিসি কাজী নাহিদ রসুল।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা এবং সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

জেডএস