প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক, সময়োপযোগী ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যাতে তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনী দেশের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্তভাবে গড়ে উঠবে।’

শেখ হাসিনা আজ (শনিবার) সকালে রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেজিমেন্ট, ‘বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট’ তথা ‘বীর’ এর ৩য় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সেনাবাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার পদক্ষেপ আমরা হাতে নিয়েছি। কাজেই আমরা চাই আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনী দেশের যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্তভাবে গড়ে উঠবে।

শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীও সেভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কাজেই এভাবেই আমরা সকলে এক হয়ে আমাদের দেশকে গড়ে তুলে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নিচ্ছি। তাছাড়া দারিদ্র বিমোচন করে দেশকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ায় আজকের বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল বলে পরিগণিত হয়েছে। আজকের বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলা করতে পারেনা । বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরা সেভাবেই সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি আধুনিক, পেশাদার ও চৌকস সশস্ত্রবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। এ ছাড়া তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই আমরা ‘প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮’ ও ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন করা হচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘দুর্জয়, দুরন্ত, নির্ভীক’- এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সঙ্গে রয়েছে আমার গভীর বন্ধন। কারণ, জাতির যে আকাঙ্খা ছিল বাংলাদেশের নামে একটি রেজিমেন্ট হবে, ২০০১ সালেই সেই রেজিমেন্ট আমরা প্রতিষ্ঠা করি।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এই রেজিমেন্টকে ‘রেজিমেন্টাল কালার’ প্রদান করি এবং ২০১১ সালে আমিই এই রেজিমেন্টকে মর্যাদাপূর্ণ ‘জাতীয় পতাকা’ প্রদান করি। বর্তমানে এই রেজিমেন্টে দু’টি প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ মোট ৪৬টি ইউনিট রয়েছে।

‘এই ইউনিটের সদস্যগণ দেশ ও দেশের বাইরে দক্ষতা, সুনাম ও দেশপ্রেমের সাথে দায়িত্ব পালন করছে,’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তারা এই কাজের মধ্য দিয়ে যে সুনাম অর্জন করেছেন তা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও অবদান রেখে যাচ্ছেন এবং দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তারা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করছেন।’ 

কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও এর ক্ষতির সম্মুখীন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কারণেই আমরা ইতোমধ্যে সকলকে আহ্বান জানিয়েছি প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

শেখ হাসিনা দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা বার বার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বলেই দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত,সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। প্রতিটি পরিবারই সুন্দরভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে।

তার সরকারের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাস্তা-ঘাট, সেতু, ব্রিজ আমরা করে দিচ্ছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেই ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়ে তুলবো।

বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৩য় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত যে  সেনা সদস্যরা ‘হোম অব বীর’ বা নিজেদের বাড়িতে আজকে এই মিলনমেলায় যোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চাকরিলদ্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বর্তমান চাকরিরতদের সঙ্গে তারা ভাগাভাগি করে নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে চড়ে রেজিমেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন।

তিনি বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের শহীদদের স্মরণে নির্মিত ‘বীরগৌরব’ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

শেখ হাসিনা রেজিমেন্ট সদস্যদের পরিবেশিত ‘মাসকেট্রি ড্রিল’সহ অন্যান্য ড্রিল উপভোগ করেন এবং রেজিমেন্টের দরবারেও যোগ দেন।

সূত্র : বাসস।  

এনএফ