ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজিব রঞ্জন বলেছেন, আবহমান কাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। পারস্পরিক প্রণয়, আনুকূল্য, মিত্রতা, সখ্য ও সৌহার্দ্য  সম্প্রীতিময় বাঙালি সংস্কৃতির মূল অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার (১ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরের ফিরিঙ্গি বাজার ব্রিজ ঘাটায় যুগ-পুরুষোত্তম পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের ১৩৬তম জন্ম-মহোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সৎসঙ্গ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জন্মদিবস উপলক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক ভক্ত শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ।

দিনব্যাপী উৎসবে প্রায় ২০ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবা দিতে দেশে এসেছেন একদল ভারতীয় চিকিৎসক। ডা. টিপু মজুমদার ও ডা. অজয় ভট্টাচার্য্যের সঞ্চালনায় চিকিৎসা সম্মেলনে যোগ দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিতাই প্রসাদ দও, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. প্রতীক চৌধুরী, ডা. সৌমেন চৌধুরী, ডা. সৌরভ সাগর, ডা. প্রভাল চক্রবর্তী ও ডা. বিউটি পাল নন্দী।

বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি লক্ষাধিক ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জন্ম-মহোৎসবে। শুক্রবার সকালে মাঙ্গলিক বেদ পাঠ ও ঊষা কীর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দিনব্যাপী সেখানে মাতৃসম্মেলন, শিশু-কিশোরদের নিয়ে সৎসঙ্গ, সংগীতানুষ্ঠান, সাধারণ সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দের সভাপতিত্বে বিকেলে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক  শ্যামল দত্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ শ্রী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, সৎসঙ্গ বাংলাদেশের সহ-সম্পাদক শ্রী সুব্রত আদিত্য, শ্রী নটো কিশোর আদিত্য ও শ্রী তিমির সেন।

এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দও বলেন, সান্ধ্যকালীন সময়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রার্থনার দৃশ্য দেখে স্বর্গীয় অনুভূতিতে অভিভূত হয়েছি। সামাজিক অবক্ষয় রোধে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবন অনুসরণের বিকল্প নেই। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, যে কর্ম মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়, সে মানুষ তৈরির মাধ্যমে সমাজের অবক্ষয় থেকে মুক্তি সম্ভব।

প্রসঙ্গত, শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সনাতন ধর্মের একজন আধ্যাত্মিক পুরুষ। তিনি ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার অদূরে পদ্মা নদীর তীরে হিমাইতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। অনুকূলচন্দ্রের পিতা শিবচন্দ্র ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। তার মা মনোমোহিনী দেবী ছিলেন একজন স্বতীসাধ্বী রমণী। তিনি উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য। কেউ তাকে বলতেন ‘প্রভু’ আবার কেউ একধাপ এগিয়ে বলতেন অনুকূল আমাদের রাজা ভাই। ঠাকুর অনুকূলচন্দের আধ্যাত্মিক প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ  হয়ে দলে দলে ভক্তরা এসে তা শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। ঠাকুর অনুকূল চন্দের প্রতিষ্ঠিত 'হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রম' উপমাহাদেশে সুপরিচিতি লাভ করে। মহাত্মা গান্ধী এই সৎসঙ্গের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। ১৯৬৯ সনের ২৭ জানুয়ারী তারিখে ৮১ বছর বয়সে তারই প্রতিষ্ঠিত আশ্রম ভারতের বিহারের দেওঘরে দেহ ত্যাগ করেন।

এমআর/এমএ