চট্টগ্রামে লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও হাসপাতাল দেদারসে চলছে। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধে অভিযান চললেও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের কার্যক্রম। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই এসব প্রতিষ্ঠান চালু রাখার অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রামের বন্দরের মাইলের মাথা এলাকার ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতালটি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় অবৈধ। হাসপাতালটি অনিবন্ধিত হওয়ায় অভিযান পরিচালনা করে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অথচ হাসপাতালটি বন্ধ হয়নি। একইভাবে চন্দনাইশের শেভরণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পটিয়ার ইউনাইটেড ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিও বন্ধের তালিকায় রয়েছে। অথচ এগুলোও চালু রয়েছে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা, ‘অনিবন্ধিত/লাইসেন্স বিহীন বেসরকারি হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ক্লিনিক/ব্লাড ব্যাংকের সব কার্যক্রম দশ কর্মদিবসের মধ্যে বন্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বন্ধের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমের অনুরোধ করা হলো।’

অন্যদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন অন্য চিঠিতে চট্টগ্রাম বিভাগের সব সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। তালিকায় ১১৮টি হাসপাতাল ও ১২২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্সবিহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় অনিবন্ধিত হাসপাতালের সংখ্যা ৬টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১টি।

সরেজমিন দেখা গেছে, বন্দরের মাইলের মাথা এলাকার ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতাল এখনো চালু রয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ও বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালটি খোলা থাকে।

একইভাবে স্বাস্থ্য অধিপ্তর চট্টগ্রামের বন্ধের তালিকায় থাকা অগ্রণী ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চন্দনাইশের শেভরণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পটিয়ার ইউনাইটেড ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিও খোলা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান ৩টির মধ্যে অগ্রণী ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগী ভর্তি বন্ধ রাখলেও ইমারজেন্সি সেবা খোলা রেখেছে। অর্থাৎ হাসপাতাল পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। হাসপাতালটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য খোকন নাথ বলেন, হাসপাতালে ইমারজেন্সি সেবা চালু রেখেছেন তারা। এরচেয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, অনুমোদন থাকা অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়োগপত্রও নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্স, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের নামও নেই অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়ার পর বিষয়টি সব সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়। পরে অভিযান পরিচালনা করে এসব ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বন্ধের তালিকায় থাকার পরও কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে— এমন প্রশ্নে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘বন্ধের তালিকায় থাকার পরও ক্লিনিক-হাসপাতাল দেদারসে চলছে। এর মানে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যানেজ হয়ে গেছে। এছাড়া দেখবেন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালাতে তারা সাহস করে না। তাদের উচিত বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও অভিযান পরিচাল করা।’

এমআর/এসএম