পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে মামার মৃত্যু, ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন ভাগনে
রাজধানীর বেইলি রোডের সাততলা ভবনে আগুনের ঘটনায় জানালার কাচ ভেঙে পাইপ ধরে নিচে নামতে গিয়ে লাশ হলেন রেস্টুরেন্টে কর্মরত জুয়েল গাজী নামের এক বাবুর্চি। একই রেস্টুরেন্টে মামা-ভাগ্নে একসঙ্গে কাজ করলেও ঝুঁকি নিয়ে কেবল নিচে নেমে আসতে পেরেছিলেন জুয়েলের ভাগনে রাকিব।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে মরদেহ গ্রহণ করতে এসে নিজ চোখে দেখা সেই ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাকিব এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ভবনটির ছয়তলায় রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতাম আমি এবং মামা (জুয়েল গাজী)। রাতে যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করছিলাম, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে যখন শুনলাম আগুন লেগেছে, তখন সবাই ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করছিল এবং বের হওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।
আরও পড়ুন
রাকিব বলেন, আগুন লাগার পর রেস্টুরেন্টের ভেতরে চারপাশ থেকে ধোঁয়া আসছিল। ধীরে ধীরে আগুনের মাত্রা বাড়ছিল এবং প্রচণ্ড তাপ আসছিল। এরপর আমরা জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলি। তখন আমি বাইরের ঝুলতে থাকা ডিসের তার ধরে নামার চেষ্টা করি এবং কোনো রকমে নেমে আসি। আমার পরই সেই তার ধরে নামার চেষ্টা করেন মামা।
তিনি বলেন, মামা তার ধরে কিছুক্ষণ নামার পর তিনি একটা এসির ওপর দাঁড়ান, এরপর পানির পাইপে ধরে সেখান থেকে নামার চেষ্টা করেন। সেই মুহূর্তেই তিনি পাইপ ভেঙে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে আজ সকালে মামা মারা যান বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, জুয়েল গাজী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার বাসিন্দা। পারিবারিক জীবনে তার ছোট একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত বহুতল ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এতে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল রাতে বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।
তিনতলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।
টিআই/কেএ