কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কাঁদছেন, কেউ করছেন কোরআন তেলাওয়াত, আবার অনেকেই হাত তুলে আল্লাহর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন প্রিয়জনের আত্মার মাগফেরাতের— এমন দৃশ্যই দেখা গেল রাজধানীর আজিমপুরের কবরস্থানে। শবে বরাতের রাতে প্রিয়জনের আত্মার মাগফেরাত কামনায় আশপাশ কিংবা দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন এসব মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই কবরস্থানে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। আর এশার নামাজের পর যেন মানুষের ঢল নামে কবরস্থানে। এ অবস্থা চলতে থাকবে সারারাত ধরেই। ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্বজনজনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করবেন আর আল্লাহর কাছে ক্ষমার ফরিয়াদ জানাবেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অন্য সময় নিরাপত্তার জন্য প্রধান ফটক ছাড়া বাকি গেট বন্ধ থাকলেও মানুষের সুবিধার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দুটি গেট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই পাশের ছোট গেট দিয়েও মানুষ প্রবেশ করছেন। নিরাপত্তাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। কবরস্থানের ভেতরে তদারকি করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কবরস্থানের মাঝের দোতলা ওয়াক ওয়ে মানুষে ভরপুর।

বাবার কবর জিয়ারত করতে আসা আব্দুল জব্বার বলেন, আজিমপুর কবরস্থানে আমাদের পূর্বপুরুষদের দাফন করা হয়েছে। আমার বাবা-মা মারা গেছেন। তাদেরও এখানে দাফন করেছি। আমি প্রতি শবে বরাতে এখানে আসি। অন্য সময়ও আসা হয়। মূলত পরিবার-পরিজনসহ যারা কবরবাসী হয়ে গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করার জন্য আজ এসেছি।

শেখ ফরিদ নামে আরেকজন বলেন, আমার ভাই মারা গেছেন করোনার সময়। যদিও তার কবরটি আর নেই। সেখানে সাত-আট মাস পরই অন্য মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে। তারপরও ভাইয়ের স্মৃতির টানে এখানে এসেছি। কবর জিয়ারত করব।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরের কবর জিয়ারত করতে আসা আরিফ রব্বানী বলেন, শবে বরাতে এখানে অনেক মানুষের ভিড় হয়। আমি আমার শ্বশুরের কবর জিয়ারত করার জন্য এসেছি। কবরস্থানে এলে আত্মশুদ্ধির একটি বিষয় এমনিতেই চলে আসে। অপরাধ করার মানসিকতা কমে যায়।

উল্লেখ্য, শবে বরাতের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সময় কাটাবেন। একইসঙ্গে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে করা হবে বিশেষ মোনাজাত।

আরএইচটি/এসএসএইচ