প্রবাসী বন্ধু সেজে কল, ছয় মাসে দুর্জয়ের আড়াই হাজার প্রতারণা
অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে— বন্ধু চিনতে পেরেছিস? উত্তরে না, চিনতে পারছি না। তখন বলা হয়, তোর কোন বন্ধু বিদেশে থাকে? এ প্রান্ত থেকে বিদেশ থাকা বন্ধুর নাম বলতেই, সেই নামেই বন্ধু সেজে কথা বলা শুরু করে প্রতারক।
এভাবে কল করে বলে মা কিংবা বাবা ভীষণ অসুস্থ। হঠাৎ দেশে আসায় টাকাও ম্যানেজ করতে পারিনি। কখনো বলে মা মারা গেছে। টাকা পাঠানোর পরই সিম বন্ধ করে দিতো। পরে ভুক্তভোগীরা বুঝতো প্রতারণার শিকার হয়েছিন তিনি। এভাবে সিম্প্যাথি দেখিয়ে অভিনব কায়দায় গত ছয় মাসে আড়াই হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন সাইফুল ইসলাম দুর্জয় নামে এক প্রতারক।
বিজ্ঞাপন
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে এই অভিনব কায়দায় প্রতারণায় জড়িত দুর্জয়কে রাজধানীর সবুজবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম।
আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী আমির হোসাইন মোল্লাসহ তার দুই বন্ধুকে আসামি মো. সাইফুল ইসলাম আতিকুল্লাহ শাহের পরিচয়ে আমিরদের ফোন করে নিজের মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানায় এবং জরুরিভিত্তিতে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে পেয়ে তারা তিন বন্ধু মিলে সঙ্গে সঙ্গে ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। এরপর যোগাযোগ করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ-নিয়ে জানতে পারেন তাদের পরিচয়ও ভুয়া। এরপর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে সেই সূত্র ধরে প্রতারক দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
হারুন বলেন, আসামি এর আগেও একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। তার বাড়ী নীলফামারি জেলার ডোমার থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে সে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করে এবং পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।
পুরো নীলফামরী জেলায় জিনের বাদশা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত দুর্জয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের অংশে চলে যায়। সে প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই প্রতারণার সাথে জড়িত। এই কাজে তার কয়েকজন সহযোগীও আছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে এবং আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে।
দীর্ঘ ১০ বছরে সে কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশ প্রধান হারুন বলেন, তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা না গেলেও গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সে প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন ব্যক্তিকে ফোন করেছে। যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি তাদের অধিকাংশই প্রতারিত হয়েছেন, সিম্প্যাথি থেকে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন।
প্রতারণার কাজে চুরি করা ফোন ব্যবহার করা হতো জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তার সহযোগী মির্জা গত ৩ জানুয়ারি নীলফামারী জেলার ডিমলা থানা এলাকার একটি নির্বাচনী মিছিল থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে তাকে এনে দেয়। প্রথমে সে ওই ফোনের বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয় এবং পরবর্তীতে ওই ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা করে।
আরও পড়ুন
টেলিফোনে যেভাবে প্রতারণা করে আসামি দুর্জয়
প্রতারক: বন্ধু চিনতে পেরেছিস?
ভিকটিম: না, চিনতে পারছি না।
প্রতারক: তোর কোন বন্ধু বিদেশে থাকে?
ভিকটিম: আতিক বলছিস?
প্রতারক: হ্যাঁ বন্ধু, আমি আতিক। বন্ধু আমি হঠাৎ করে দেশে আসছি। আমার মা অসুস্থ ছিল। আজকে হাসপাতালে আমার মা মারা গেছে। জরুরিভিত্তিতে কিছু টাকা পাঠাতে পারবি?
ভিকটিম: হ্যাঁ পারবো। কত টাকা লাগবে বল?
প্রতারক: ৭০০০০ টাকা পাঠিয়ে দে। আর বন্ধুদের নম্বরগুলো এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, ওদের নম্বরগুলো আমাকে দে। যদি পারিস কয়েকজনকে বল আমাকে এই নম্বরে কল দিতে।
এরপর যথারীতি পাঠানো টাকা হাতিয়ে নিয়ে সিম ও ফোন করে দিতো দুর্জয়।
জেইউ/এনএফ