যথাসময়ে মেট্রোরেল চলার নিশ্চয়তা চান যাত্রীরা
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রথম বিপ্লব হয় ২০২২ সালে ২৯ ডিসেম্বর। ওই দিন ঢাকাবাসী উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়াল পথে বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ পান। প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রতিটি মেট্রো ট্রেন সময় নিয়েছে মাত্র ১৫ মিনিট। ওই দিন থেকে এক বছর ২২ দিন পরে গত জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রো রুট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই বিভিন্ন কারণে চলতি পথে থেমে যাচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত দ্রুতগতির এই বাহনটি। ফলে নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্ব হচ্ছে ট্রেন চলাচলে। এছাড়া উড়াল পথে থাকায় নেমে হেঁটে যাওয়ার সুযোগও নেই যাত্রীদের। থেমে থাকাকালীন সময়ে যাত্রীদের থাকতে হচ্ছে ট্রেনের ভেতরেই। এতে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন, আবার অনেকের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। এ অবস্থায় যাত্রীরা যথাসময়ে মেট্রোরেল চলার নিশ্চয়তা চাচ্ছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
বিজ্ঞাপন
যখন যখন বন্ধ ছিল মেট্রোরেল
সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ট্রেনের অটোমেটিক ডোরে সিগন্যাল না পাওয়ার ঘটনায় ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিট মেট্রোরেলে চলাচল বন্ধ ছিল। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মেট্রোরেলের তারে ঘুড়ি আটকে যাওয়ার কারণে ৩৫ মিনিটের মতো সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল; গত ৪ ফেব্রুয়ারি পল্লবী সেকশনে বৈদ্যুতিক তারে ১ হাজার ৫০০ ভোল্টেজ থেকে ০ ভোল্টেজ হওয়ার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। গত ২৩ জানুয়ারি মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগমুখী রুটে বৈদ্যুতিক লাইনের তারের ওপর ডিশের তার পড়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
আরও পড়ুন
এর আগে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট উত্তরা-আগারগাঁও রুটে চলাচল করা একটি ট্রেনে ইমার্জেন্সি ব্রেক হওয়াতে এক ঘণ্টার বেশি সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল; গত ৯ আগস্ট মেট্রোরেলের লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সাব-স্টেশনগুলোর মধ্যে শেওড়াপাড়া সাব-স্টেশনে বৈদ্যুতিক লাইন ফেইল করায় সোয়া ২ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল; ৭ আগস্ট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সকালে ট্রেন ছাড়তে ৪০ মিনিট বিলম্ব হয়; ১৯ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বৈদ্যুতিক তারে ঘুড়ি আটকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল এবং ১ জানুয়ারি মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ফাঁসুন আটকে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
মেট্রোরেল অপারেশনের গত ১ বছর ১ মাস ২১ দিনের মধ্যে ১০ দিন মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটছে এ বছরের গত ২ মাসে।
মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন— যা বলছেন যাত্রীরা
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগে কাজ করেন শামসুজ্জামান জয়। তিনি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অফিসে যান দেড় ঘণ্টা দেরিতে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আমি নিয়মিত মেট্রোরেলে চলাচল করি। বাসে মিরপুর-১০ নাম্বার গোল চত্বরের জ্যাম পাড়ি দেওয়ার চেয়ে মেট্রোরেল উত্তম। খুব অনায়াসেই হাতেগোনা কয়েক মিনিটের মধ্যেই পল্লবী থেকে আগারগাঁও এসে নামা যায়। ওই দিন আমি পল্লবী স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি। যখন প্লাটফর্মে উঠি, পল্লবী স্টেশনের প্লাটফর্মে তখন দেখি একটি ট্রেন দাঁড়ানো আছে। এদিকে দোতলার কনকোর্স প্লাজায় অনেক ভিড় ছিল মানুষের। ট্রেনের দরজা খোলার পর আমি ট্রেনে উঠলাম। তারপর দরজা বন্ধ হয়ে গেল, আমি প্রথম দফায় প্রায় ১৫ মিনিট ট্রেনের মধ্যে আটকে ছিলাম। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে কোথাও যায়নি। এভাবে প্রায় ঘণ্টা খানিক সময় পার হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ওই সময় এসি চলছিল বলে তেমন কোনো অসুবিধে হয়নি। দরজা বন্ধ অবস্থায় ট্রেনটি প্লাটফর্মে অবস্থান করছিল বলে তেমন আতঙ্কিত হইনি। যদি এই আটকা রাস্তার কোনো মাঝামাঝিতে হতো, তাহলে নিশ্চয়ই আতঙ্কিত হয়ে যেতাম। প্ল্যাটফর্মে থাকার জন্য আতঙ্ক ছিল না, তবে বিরক্তি ছিল। এর আগেও দুএকবার আটকে গেছি। তবে সেটা দীর্ঘ সময় ছিল না। ওই দিন প্রায় এক ঘণ্টা শুধু মেট্রোরেলের কারণে লস হয়েছে। ফলে আমার অফিসে পৌঁছাতেও দেরি হয়।
নাজমুল হাসান নামের আরেক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৪ তারিখ আমি ট্রেনে আটকে ছিলাম। ১৪ তারিখ দুপুরের দিকে আমি সচিবালয় স্টেশনে থেকে টিকেট কেটে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করি। প্ল্যাটফর্মে আমি ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর একটি ট্রেন আসে। ওই ট্রেন শাহবাগ স্টেশনে এসে ২০ মিনিটের মত বিলম্ব করে। আমরা মূলত তাড়াতাড়ি উত্তরা যাওয়ার জন্য মেট্রোলের টিকেট সংগ্রহ করি। অনেক মানুষ ছিল ট্রেনের ভেতরে, দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। ট্রেনের কোচ পরিপূর্ণ ছিল মানুষে। ঘাড় ঘোরানোর মত অবস্থা ছিল না। ট্রেনের এসি কাজ করলেও মানুষের ভিড়ে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা ছিল।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আমার সামনের অন্তত ৫-৬ জন যাত্রী শাহবাগ স্টেশন থেকে নেমে বাসে চলে গেছে। ট্রেনে উপস্থিত যাত্রীরা খুবই বিরক্ত প্রকাশ করছিলেন। তারা বলছিল দ্রুত যাওয়ার জন্য যেহেতু মেট্রোরেলে উঠেছি। কিন্তু মেট্রোরেল যদি স্টেশনের দফায় দফায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে নেমে অন্য পরিবহনে যাওয়াই ভালো।
আসাদ আবেদীন নামে আরেক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তো প্রত্যেকদিন একটা নির্দিষ্ট সময় সেট করে বাসা থেকে বের হই। কারণ আমি জানি, আমার ট্রেন মিরপুর-১০ নাম্বার থেকে সচিবালয় স্টেশনে বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দেবে। আমার সাড়ে দশটায় কাজ থাকলে আমি দশটার সময় স্টেশনে থাকি। যদি কোনো কারণে ট্রেনে সময় মত যেতে না পারি, তাহলে আমি সেই প্রোগ্রামে এটেন্ড করতে পারবোনা। জরুরি কোনো কাজও মিস হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, সব মানুষই অল্টারনেটিভ চিন্তা করে। কিন্তু যেখানে সময় গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে আসলে অল্টারনেটিভ চিন্তাটা খুব একটা কাজে লাগে না। আমি যদি ৩০ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হই, এরপরে মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখলাম ট্রেন আসেনি, পরে আবার বাসে যাব। সবমিলিয়ে আমার সময়টাই নষ্ট। এটা একজন যাত্রীর জন্য বড় ধরনের হেসেল। জটিলতা কটিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন সময়টা ধরে রাখে। কারণ, এই সময় ধরে রাখার জন্যই মানুষ মেট্রোরেলকে ভালোবাসে।
আক্ষেপ করে মেহেদী হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, জাপানে মেট্রোরেলে যাত্রী ধারনের তিল পরিমাণ জায়গা থাকে না। দরজা বন্ধ হওয়ার জন্য যাত্রীদের ভেতরে ঠেলে দেওয়ার জন্য জনবল নিয়োগ হয়। তারপরেও মেট্রোরেলে ত্রুটি হয় না, কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই সময়মতো যাত্রী পরিবহন হয়। তাহলে আমাদের দেশে এতো সমস্যা কেন? দোষ না দিয়ে সমস্যার কারণ বের করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মেট্রোরেল যান্ত্রিক ত্রুটি মুক্ত করতে ও ট্রেন চলাচলের সময় ধরে রাখতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কি করতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটা মেট্রোরেল বাণিজ্যিকভাবে চালু করার আগে আমাদের অনেকগুলো প্রটোকল আছে। প্রটোকল অনুসরণ করে সবগুলো টেস্ট যথাযথভাবে করা হয়েছে কিনা, সেটা যাচাই-বাছাইয়ের একটা দাবি রাখে। কারণ বারবারই আমরা নানা সমস্যা দেখছি। এছাড়া দ্রুত ওপেনিং করার একটা চাপ ছিল। এর বাইরে আমার কাছে মনে হয়, পরিকল্পনায় আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার ছিল।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ভারতের কিছু কিছু রাষ্ট্রে মেট্রো লাইন আছে যেখানে ফানুস পড়া এরকম জটিলতায় ভুগছে, এরকম একটা লাইন হচ্ছে দিল্লির মেট্রো জয়পুরহাটেও এমন আছে। আবার কিছু কিছু শহরে এই সমস্যা হচ্ছে না। জনবহুল ঢাকা শহরে উড়াল পথে যে মেট্রো আমরা চালু করলাম, এটা কিন্তু একটা পুরাতন প্রযুক্তি। আমরা কিন্তু থার্ড রেল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারতাম। যেহেতু উড়ালপথ, এই থার্ডরেল প্রযুক্তি আমাদের জন্য ভালো হতো। কারণ থার্ডরেল প্রযুক্তিতে ট্রেনের দুটা রেল লাইনের পাশাপাশি আরেকটা লাইন থাকে, যেটা দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়। ফলে থার্ডরেল লাইন থেকে ট্রেন বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে। এটার উপর যদি আস্ত একটি গাছও পড়ে, তবুও সেটি দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায়। কারণ সেটি দেখা যাচ্ছে। ট্রেনের সামনেও সুইপিং সিস্টেমও থাকে। এই প্রযুক্তি ১৯৮৪ সালে কলকাতা মেট্রো ব্যবহার করেছে।
বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, আমরা তো এক একবিংশ শতাব্দীতে এসে মেট্রো তৈরি করলাম। সাম্প্রতিক সময়ে শুধুমাত্র বাংলাদেশ আর ইন্দোনেশিয়াতে তার ঝুলিয়ে মেট্রো তৈরি করেছে। এই প্রযুক্তি এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। এই প্রযুক্তি আমাদেরকে ভোগাবে।
তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তিনভাবে চিন্তা করতে পারে। তারা যে সচেতনতার কথা বলছে সেই সচেতনতা অবশ্যই লাগবে। ১ থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যে ঘুড়ি উড়ানোকে নিরুৎসাহিত করা। এর মধ্যে দুটা জিনিস আছে। ঘুড়ি যখন তারের উপর পড়ছে, তখন ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটা একটা সমস্যা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এর পাশাপাশি আরও একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের দেশে অনেকে ঘুড়ি উড়ায় তাদের সুতায় মেটাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যখন ঘুড়ির সুতা ওভারহেডকটেনারির উপর পড়ে, তখন সুতার মেটালের মাধ্যমে নাটাই হাতের ব্যক্তি বিদ্যুতায়িত হয়ে যাবে। ভারতে কিন্তু এরকম মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং ঘুড়ির কারণে মেট্রো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটা বলার পাশাপাশি এই কথাটা বলতে হবে যে ঘুড়ির সুতো লাগলে আপনিও বিদ্যুতায়িত হতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, আমাদের যে তার ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে আমরা গ্যালভানাইজেশন কোটিং ব্যবহার করতে পারি। এটি থাকলে সেই তারে সুতা পেঁচিয়ে যাবে না, বরং সুতা পিছলে যাবে। গ্যালভানাইজেশন করলে সেখানে নির্দিষ্ট সময় পরে মরিচা ধরার একটা সম্ভাবনা থাকে। সমস্যা জটিল হলেও সমাধান কিন্তু সহজ না।
তৃতীয়ত হচ্ছে, বাইরে থেকে কেউ যেন কোন কিছু ফেলতে না পারে, সেজন্য দুই পাশে ফেন্সিং দেওয়া যেতে পারে। এই মেকানিজমটাও আমরা চিন্তা করতে পারি। এজন্যই বললাম, পরিকল্পনায় আমাদের আরও একটু যত্নবান হওয়া দরকার ছিল।
সময় ধরে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের সময় ধরে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এখানে যাত্রীদের উঠা-নামার বিষয়ে সচেতন থাকা সবচেয়ে জরুরি। বোর্ডিং এনালাইটিং যতটা ধরে রাখা সম্ভব হবে, মেট্রোলের সময় ধরে রাখার ততটা সহজ হবে। কাগজে-কলমে আমরা বলছি ৮ মিনিট পরপর ট্রেন আসবে। প্ল্যাটফর্মে থেকে ট্রেনে ওঠার জন্য যাত্রীরা দুই দরজার দুপাশ দিয়ে ওঠেন এবং ট্রেন থেকে মাঝ বরাবর নামেন। যদি ওঠার সময় কোন যাত্রী মাঝ বরাবর দাঁড়ান, তবে ট্রেন থেকে যাত্রীরা নামার সময় বাধা প্রাপ্ত হবেন। এখানে কিছু সময় যদি বিলম্ব হয়, তবে দেখবেন পরবর্তীতে ট্রেনের সময় ধরে রাখা সম্ভব হবে না। ফলে তিন থেকে চার মিনিট পর্যন্ত সময় ডিলে হতে পারে। যেহেতু এটা একটা নতুন মাধ্যম, তাই প্রথমেই যাত্রীদের এই সচেতনতা নাও আসতে পারে। এখন যারা মেট্রোরেল ব্যবহার করছেন, তারা সবাই গণপরিবহনের যাত্রী ছিল।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে এখন প্রত্যেকটা কোচে ওয়েট মাপার সেন্সর থাকে। এই সেন্সর ব্যবহার করলে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারবে না। কারণ এই সেন্সর ওজন থেকে নির্ধারণ করতে পারে কোন কোচে কত যাত্রী আছে। প্লাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে ট্রেনের দরজার সামনে জটলা তৈরি হবে। তাইওয়ান এবং মস্কোর মেট্রো ট্রেনের হেডওয়ে হচ্ছে এক দশমিক দুই মিনিট। তারা স্টেশনে উঠানামা করে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে। সুতরাং আমাদের ম্যানেজমেন্ট স্মার্ট করতে হবে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, আরও দক্ষ জনবল নিয়োগ করা। তারা যেন প্লাটফর্মের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
যান্ত্রিক ত্রুটি মুক্ত করতে এবং সময় ধরে রাখার জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে— মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভ করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কোনো কারণে কোনো কিছু ফেল হলে সেটা কত দ্রুত রিকভার করা যায়, আমরা সেটার জন্য সদা প্রস্তুত আছি এবং নিজেরাই চেষ্টা করছি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি পল্লবী সেকশনে বৈদ্যুতিক তারে ১ হাজার ৫০০ ভোল্টেজ থেকে ০ ভোল্টেজ হওয়ার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এটির তদন্তের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যতটুকু সম্ভব আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ডিএমটিসিএল'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছেন, পুরো এক বছরে মেট্রোরেল ঘণ্টাখানেক থেমেছে এরকম ঘটনা দুইটি। আর বাকি ঘটনাগুলো ১০-১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। বেশিরভাগ ঘটনা ঘুড়ি-ফানুসের জন্য। ঘুড়ি সরাতে গেলে পুরো লাইন বন্ধ করতে হয়। কারণ তারে ১ হাজার ৫০০ ভোল্টেজ থাকে। এটার সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কঙ্কাল হয়ে যাবে। এটাকে আমরা বলি, ব্লক।
তিনি আরো বলেন, ঘুড়ি ও ফানুস উড়ানোর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা ডিএমপি ও এমআরটি পুলিশকে অনুরোধ করেছি। এছাড়া আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন।
/এমএইচএন/এমএসএ