গ্রামীণ ব্যাংকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে যা বলছে ইউনূস সেন্টার
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সেখানে প্রেস কনফারেন্সে গ্রামীণ ব্যাংকের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবও দেওয়া হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই। তিনি শুধু একজন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা ছিলেন– গ্রামীণ ব্যাংকের এমন বক্তব্যের জবাবে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ তার সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে তার কোনো শেয়ার/মালিকানা নেই। তিনি তার সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কখনো কোনো অর্থ বা সম্মানী নেননি। তিনি শুধু গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালীন ব্যাংকের বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন নিয়েছেন। উল্লেখ্য, গ্রামীণ ব্যাংক ব্যতীত তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ২৮ ধারা অনুসারে গঠিত যাদের কোনো ধরনের মালিকানা থাকে না। অধ্যাপক ইউনূস কোনো বোর্ড সদস্য বা গ্রামীণ ব্যাংক এগুলোর মালিক নন। এগুলোর কোনো মালিক নেই। স্পন্সর সদস্যদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোম্পানিগুলো গঠন করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এই নট-ফর-প্রফিট কোম্পানিগুলির কোনোটিরই মালিক নয়।
বিজ্ঞাপন
মানি লন্ডারিংয়ের আলামত পেয়েছি। এর মধ্যেও অনেক তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে কাউকে দোষী করছি না– গ্রামীণ ব্যাংকের এমন বক্তব্যের জবাবে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকে বরাবরের মতো দেশের প্রথিতযশা ও খ্যাতিমান অডিটর রহমান রহমান হক, হোদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কো., একনাবীন, এ কাশেম অ্যান্ড কোম্পানি বার্ষিক অডিট করেছেন। তারা কোনো সময়ে এ প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক টিম ও সরকারের গঠিত কমিটি ও কমিশন এ ধরনের কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি।
আরও পড়ুন
টেলিকম ভবনসহ সব কিছু গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু হলে সেটি আইনগত অপরাধ– গ্রামীণ ব্যাংকের এমন বক্তব্যের জবাবে বলা হয়, টেলিকম ভবনসহ সব কিছু গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে করা হয়েছে বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে টেলিকম ভবন বা অন্য কোনো স্থাপনা বা কোনো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেন, কোনো ধরনের এখতিয়ার বা সম্পর্ক না থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আটটি প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে জবরদখল করছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের তার নিজস্ব সংঘবিধি আছে। আইনকানুন আছে। সেসব তো পালিয়ে যায়নি। আইন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে যদি কারো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আইন-আদালত আছে। সেখানে পরিষ্কার হবে। কিন্তু জবরদখল কেন? এখানে যদি জালিয়াতির বিষয় থাকে তাহলে নিষ্পত্তির সুযোগ আছে আদালতে।
পরে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক আইন অনুযায়ী ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকসহ বাকি সাত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নন।
তিনি বলেন, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ শক্তি নামক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভার অনুমোদনে ও গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় তৈরি হয়েছে। আইন অনুযায়ী এই সাতটি প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ যাদের হাতে এ আইন তৈরি হয়েছে, তারা এ আইনি প্রক্রিয়াকে জবরদখল বলে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছেন।
এসএসএইচ