শারীরিক প্রতিবন্ধী কিংবা চলাফেরায় সমস্যা এমন ব্যক্তিরা অমর একুশে বইমেলায় ঘুরে বেড়াতে পারছেন হুইলচেয়ারে বসে। মেলার টিএসসি ও রমনা সংলগ্ন প্রবেশ পথের বাইরে থেকেই যে কেউ চাইলেই এই সেবা নিতে পারছেন। বইমেলায় ঘুরতে আসা অসুস্থ পাঠক-দর্শনার্থীদের  জন্য এমন সুযোগ করে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা যায়, বইমেলার বাইরে রমনা ও টিএসসি সংলগ্ন প্রবেশ পথে সারিবদ্ধভাবে হুইলচেয়ার নিয়ে অপেক্ষা করছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের মধ্যে যারাই হাঁটতে অপারগ কিংবা অসুস্থ তারাই হুইলচেয়ারে বসে মেলায় প্রবেশ করছেন। আর হুইলচেয়ার পরিচালনা করছেন একজন স্বেচ্ছাসেবী। এ জন্য কোনো অর্থও দিতে হচ্ছে না।  

সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অমর একুশে বইমেলায় আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও হেঁটে চলাফেরা করতে অসুবিধা এমন দর্শনার্থীদের জন্য আমরা হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করেছি। গত ৯ বছর ধরেই আমরা প্রতিটি বই মেলায় শারীরিক প্রতিবন্ধী ও যাদের পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় এমন দর্শনার্থীদের হুইল চেয়ারের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছি।  

তিনি বলেন,  হাঁটতে পারেন না এমন ব্যক্তিরা মেলার গেট পর্যন্ত যে কোনোভাবে পৌঁছাতে পারলেই আর চিন্তা নেই। আমরা কোনো অর্থ ছাড়াই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর যতক্ষণ পর্যন্ত ইচ্ছে হয়, ততক্ষণ মেলায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। মেলার দুই প্রান্ত টিএসসি এবং দোয়েল চত্বরে মোট ২০টি হুইল চেয়ার ও ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী থাকেন সেবা দেওয়ার জন্য। হুইল চেয়ারগুলোর ব্যবস্থা করেছে বাংলা একাডেমি ও স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। এছাড়াও প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সেবামূলক কার্যক্রম চলবে মেলার শেষ সময় পর্যন্ত চলবে। 

বইমেলায় হুইল চেয়ারের এমন ফ্রি সেবায় খুশি বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সাধারণ মানুষজন। আব্দুল হামিদ নামের এক সেবাগ্রহীতা বলেন, বৃদ্ধ হয়ে গেছি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাঁটতে অসুবিধা হয়। তারপরও বইয়ের টানে মেলায় এসেছি। এখানে আসার পর এমন সুন্দর ব্যবস্থাপনা দেখে সত্যিই খুব খুশি লাগছে। যদিও আমি আগেও অনেকবার এই সেবা নিয়েছি। আমাদের মতো মানুষের জন্য এটি খুবই ভালো একটি কার্যক্রম।

শরিফুল ইসলাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, এই সেবার কথা এখনো অনেকেই জানেন না। তাহলে হয়ত যারা বৃদ্ধ আছেন কিংবা চলাচল করতে অক্ষম তারাও বইমেলায় আসার সাহস করতে পারবেন। এই কার্যক্রমের প্রচার ও প্রচার হওয়া প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ডিএমসি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে পরিচালিত সংগঠন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। পথ শিশুদের শিক্ষা দান, ১০ টাকায় খুশি, বইমেলায় হুইলচেয়ার সেবা, সুইচ ক্রাফট, পরিষ্কার পরিচ্ছনতার উপরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও দুযোর্গকালীন ত্রাণসহ নানান স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম করে আসছে সংগঠনটি।

আরএইচটি/এসকেডি