কানাডার গ্রিনকার্ডধারী পরিচয়ে শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলেছেন এহসান
নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া এলাকার আব্দুর রবের ছেলে এহসান আহমেদ (৩০)। নিজেকে পরিচয় দিতেন কানাডায় স্থায়ী বসবাসের গ্রিনকার্ডধারী পিএইচডি সম্পন্ন করা ও দেশের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের সন্তান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবারের তরুণীদের টার্গেট করতেন এহসান। বিশেষ করে যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যেতে ইচ্ছুক এমন তরুণীদের সঙ্গে পরিচিত হতেন। এরপর সরাসরি দেখা করতেন। সেখানে তার পরিচয় ও বেশভূষা বিশ্বাসযোগ্য করতে নামিদামি গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতেন। এভাবে শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন এহসান।
কানাডায় স্ত্রী হিসেবে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক। নানা কৌশলে হাতিয়ে নেন ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও। এরপর শুরু করেন ব্ল্যাকমেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পরিচিতদের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার করে আসছিলেন এ প্রতারক।
সম্প্রতি রাজধানীর মুগদা থানায় ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এহসানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
আরও পড়ুন
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সাবেক এক ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রতারক এহসানের। তিনি নিজেকে কানাডা প্রবাসী, পিএইচডি ডিগ্রিধারী, বড় শিল্পপতি পরিবারের সন্তান পরিচয় দেন। তাদের গুলশানে বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ির রয়েছে এমন তথ্য দেন। এসব পরিচয় ব্যবহার করে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রেমের সুযোগে ভুক্তভোগী তরুণীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্বজনদের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন এহসান।
তিনি বলেন, এর আগেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ফারদিন, সাকিবের মতো অনেক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে। এসব প্রতারক নিজেদের মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সচিব, বড় ব্যবসায়ীর সন্তান দাবি করে মেয়েদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নামিদামি বাড়ি-গাড়ির প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক ও আর্থিক প্রতারণা করে আসছিলেন।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার এহসান পড়াশোনা না করেও নিজেকে পিএইচডিধারী পরিচয় দিতেন। এমনকি কোনো দিন বিদেশে না যাওয়া এহসানের কানাডার গ্রিনকার্ড রয়েছে বলে প্রচার করতেন। বিভিন্ন তরুণীকে কানাডায় নেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর এখন পর্যন্ত শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন ডিবি পুলিশ প্রধান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে হারুন বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ বড় লোক, ব্যবসায়ী বা সরকারি চাকরিজীবী পরিচয় দিলে যাচাই করা উচিত। এছাড়া অনলাইনে বন্ধুত্বের নামে ব্যক্তিগত ছবি আদান-প্রদানে সতর্ক হতে হবে। কেউ যদি কারো মাধ্যমে প্রতারিত হন, তাহলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিতে হবে।
জেইউ/এসএসএইচ