বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঠক-দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন মেলায়। তবে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ এলাকায় গাঁজা সেবনকারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ দর্শনার্থীরা। সিগারেট কিংবা যেকোনো ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে মেলায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চলছে অবাধে গাঁজা সেবন।

দর্শনার্থীরা বলছেন, মেলায় প্রবেশের সময় তল্লাশিতে পুলিশের ঢিলেঢালা ভাবের কারণে অনেকে সিগারেট, লাইটার কিংবা গাঁজার মতো মাদক নিয়ে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছেন। পরে তারা মুক্তমঞ্চে গিয়ে গাাঁজা সেবন করেন। গাঁজার গন্ধে মুক্তমঞ্চে বসা এবং ওই এলাকা দিয়ে হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে মুক্তমঞ্চে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন।  

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার বাংলা একাডেমি অংশ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের প্রবেশপথে তল্লাশি যন্ত্র বসানো হলেও অন্যান্য বারের মতো দর্শনার্থীদের শরীর তল্লাশি করছে না পুলিশ। কারো কাছে ব্যাগ থাকলেও তল্লাশিতে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি পুলিশ সদস্যদের মাঝে। দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের তল্লাশি যন্ত্রের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।  

এদিকে বইমেলার মন্দির গেট দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে মুক্তমঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতেই গাঁজার তীব্র গন্ধ নাকে আসে। এছাড়া পুরো মঞ্চজুড়ে অনেক তরুণ তরুণীকে ধূমপান করতে দেখা যায়। 

বিষয়টি মেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. মোজাহিদুল ইসলামকে জানানো পর তিনি মেলায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেন।

এর কিছুক্ষণ পর মেলার প্রবেশপথে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সবাইকে তল্লাশি করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে কারও কাছে সিগারেট বা লাইটার আছে কি না জিজ্ঞেস করতেও দেখা যায়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, বইমেলা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বই মানুষকে জ্ঞানী করে তোলে, বইমেলা হলো জ্ঞানের আধার। কিন্তু একদল অসভ্য লোক এখানে বসেও গাঁজা সেবন করছে। সিগারেট খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে এটা ‘স্মোকিং জোন’। মেলার প্রবেশপথে কাউকেই তল্লাশি করা হচ্ছে না। যে যার মতো ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরও সতর্ক থাকা উচিত। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্রাম্যমাণ সিগারেট বিক্রেতা জানান, সকালে মেলার পাশের অংশ দিয়ে সিগারেট ও লাইটার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। পরে সাধারণ পলিথিনে ভরে এগুলো বিক্রি করেন। পুলিশ দেখলে টাকাসহ সিগারেট, লাইটার জব্দ করে। এজন্য লুকিয়ে বিক্রি করেন। 

মেলায় দায়িত্বরত এসআই আসাদ বলেন, তল্লাশির পরই দর্শনার্থীদের মেলার ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। কারও কাছে সিগারেট কিংবা লাইটার পাওয়া গেলে তাদের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  

সার্বিক বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বছর মুক্তমঞ্চ অংশে নাটক, আবৃত্তি রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমি আমাদের এটা করতে দেয়নি। সেখানে বসে সিগারেট ও গাঁজা সেবন করার বিষয়টি কষ্টদায়ক।

বইমেলার কন্ট্রোলরুমে থাকা শাহবাগ থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আমি এখনই এ বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশকে অবহিত করছি।  

কেএইচ/এসকেডি