ডলারে আয়ের লোভনীয় ফাঁদ পেতেছিলেন তারা
অনলাইনে বিনিয়োগে উচ্চ লাভের আশায় একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। গত কয়েক মাসে চক্রটি ৬-৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মিরপুর মডেল থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।
বিজ্ঞাপন
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন— আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৬), মো. ইমরান শেখ (২৮), মো. মাহবুবুর রহমান সাদিক (৩২) ও শাহনেওয়াজ শরীফ শামীম (৩৪)।
৩০ জানুয়ারি সাভার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি আমেরিকান কোম্পানির নাম ধারণ করে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে এমএলএম স্কিমে বিনিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা নির্ধারিত প্যাকেজের আওতায় ডলারের বিপরীতে টাকা বিনিয়োগ করতেন। আর সেই টাকা নিয়ে পলাতক হয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের মোবাইলে হ্যাচারি প্রজেক্টের নামে অন্য একটি স্কিমের তথ্য পাওয়া গেছে। যার মাধ্যমে লাখ টাকা করে নেওয়া শুরু করেছিল তারা।
তিনি বলেন, আমরা গ্রেপ্তারদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছি। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য নিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে। আর কতো সংখ্যক লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুন
প্রতারণা এড়াতে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন অবৈধ। নাম সর্বস্ব সফটওয়্যারে বা ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ না করা, অনুমোদিত ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যাতীত কোথাও লেনদেন না করারও পরামর্শ দেন তিনি।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, উচ্চ রেফারেল কমিশন এবং ৩ মাসে জমা টাকা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেয়। বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকমাসে প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা প্রতারক চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারক চক্র একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা সাধারণ গ্রাহকদের উচ্চ হারে মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্কিম প্যাকেজে ইনভেস্টমেন্ট করতে প্রলুব্ধ করে। তাছাড়াও একজন ইনভেস্টর যদি অন্য কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারে তাহলে প্যাকেজ ভেদে বিভিন্ন রকমের কমিশন প্রদান করা হতো। সেখানে রয়েছে তাদের অসংখ্য বিনিয়োগ স্কিম প্যাকেজ।
ডিবি আরও জানায়, তারা প্রায় ৬ মাস ধরে সাধারণ মানুষদের অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ক্রিপ্টোকারেন্সির সহায়তায় ডলার ডিপোজিট করতে সহায়তা করতো। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেত। যার প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, সিলভার, গোল্ড, ডায়মন্ড, প্লাটিনাম, এক্সক্লুসিভ ও ভিআইপি প্যাকেজে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হতো ভুক্তভোগীদের। এসব প্যাকেজে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে দিনে সর্বোচ্চ ২০০ ডলার রিটার্ন ও রেফারেল কমিশনে ১ হাজার ডলার পাওয়া যাবে বলে প্রচারণা চালানো হতো।
এমএসি/এনএফ