জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাবিতে এর আগেও কয়েকবার ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের নজিরবিহীন, নিকৃষ্ট এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা সারা দেশকে হতবাক করেছিল। এ ঘটনায় দ্রুত, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। 

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী নারীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী পরিবারের বাড়ি আশুলিয়ার জিরানী এলাকায়। ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান মামুন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। এরপর আটককৃতের স্ত্রীকে ফোন করে তার নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভেতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর ‘তার স্বামী ওইদিকে আছে’ বলে ওই গৃহবধূকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ বলেন, মামুন আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজুরের কাছে থাকবেন বলেও জানান।

তিনি আরও বলেন, এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসেন। পরে আমার স্বামী ওদিকে আছে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যান। তার সঙ্গে মোস্তাফিজুরও ছিল। তখন তারা আমাকে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কমিশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র স্থানে এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও কয়েকবার নারীর প্রতি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের নজিরবিহীন, নিকৃষ্ট এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা সারা দেশকে হতবাক করেছিল। বারবার একই স্থানে এমন ঘটনার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অভিযুক্তকে দ্রুতসময় গ্রেপ্তার করায় কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানাই।

তবে তিনি বলেন, দ্রুত, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ছাত্র নামের এমন কুলাঙ্গারদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ নারীর জন্য নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানায় কমিশন।”

জেইউ/পিএইচ