কুর্মিটোলায় আইসিইউ বেডের জন্য অধীর অপেক্ষা
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এখানে করোনা রোগীর জন্য শয্যা রয়েছে ২৫০টি। তবে ইতোমধ্যে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা ৩৪৮। অন্যদিকে, হাসপাতালটিতে আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই একটিও। প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ, সেইসঙ্গে বাড়ছে আইসিইউর চাহিদাও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুর্মিটোলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১০টি। বেড ফাঁকা হওয়া মাত্রই তাতে ভর্তি হচ্ছেন অপেক্ষমান রোগী। কিন্তু চাহিদার তুলনায় আইসিইউ বেড অত্যন্ত কম হওয়ায় অপেক্ষার অবসান হচ্ছে না অনেকেরই। কেউ কেউ যাচ্ছেন অন্য হাসপাতালে, কেউবা ছাড়ছেন জীবনের মায়া।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩৪৮ জন করোনা রোগী। তাদের অনেকেরই জরুরিভিত্তিতে আইসিইউ বেড দরকার। কিন্তু ফাঁকা না থাকায় সাধারণ বেডেই করতে হচ্ছে অপেক্ষা।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করছেন আজিজুল হক। তিনি হাসপাতালটির প্রশাসনিক বিভাগের কাউন্টার ম্যানেজার। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) দুপুর পর্যন্ত ৩৪৮ জন রোগী এখানে ভর্তি আছেন। হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য শয্যা রয়েছে ২৫০টি। এখানে আইসিইউ বেড রয়েছে ১০টি। কোনো বেড ফাঁকা নেই। আইসিইউর অপেক্ষায় আছেন অনেক গুরুতর রোগী।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৭ জন। এখানে বর্তমানে অক্সিজেনের সিলিন্ডার আছে ৪৩৯টি। এছাড়া হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংখ্যা ২৭টি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা ১০টি।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর ছেলে হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, আমার বাবাকে অক্সিজেন দেওয়ার পরও শারীরিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়। আইসিইউ বেডের জরুরি প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেড ফাঁকা না থাকায় সাধারণ বেডে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন অসহায় অবস্থায় আমি একা নই, অনেকেই পড়েছেন। এখানে আইসিইউ বেড মাত্র ১০টি। একটি বেড ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষায় চেয়ে আছেন আরও অনেক গুরুতর রোগী। আসলে এই চেয়ে থাকা আর সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করা ছাড়া কিছুই করার নেই আমাদের।
হাসপাতালে ভর্তি একাধিক করোনা রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাধ্য হয়ে তারা অন্য হাসপাতালে আইসিইউ বেড খুঁজছেন। কিন্তু রাজধানীতে আইসিইউ বেড এখন সোনার হরিণ।
তারা জানান, কত রোগী আইসিইউতে একটি সিটের অপেক্ষায় ছটফট করছেন, হিসাব নেই। অপেক্ষার অবসান হওয়ার আগেই জীবনাবসান হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক বলেন, একজন করোনা রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা যখন বাড়ে অথবা অক্সিজেনের সিলিন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়ার পরও যখন শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম থাকে তখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমের মাধ্যমে রোগীর অক্সিজেন চাহিদা পূরণ, পাশাপাশি ভাইটাল সিস্টেম মনিটরিং-এর জন্য আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়া খারাপ অবস্থায় রোগীর জীবন বাঁচাতে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টেরও প্রয়োজন হয়।
হাসপাতালটিতে বিগত কয়েকদিন একের পর এক রোগী শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তির জন্য এসেছেন। জরুরি বিভাগের সামনে দেখা গেছে ভর্তিচ্ছু রোগীদের ভিড়। তবে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কম দেখা গেছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগী এখন কিছুটা কম আসছে। চলমান লকডাউনে সংক্রমণ কমায় রোগীর চাপ কমেছে বলে ধারণা তাদের।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সাজেদুর রহমানের সঙ্গে। তার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। সাজেদুর বলেন, কয়েকদিন আগে বাবাকে এখানে ভর্তি করি। তিনি যেদিন ভর্তি হন সেদিন প্রচুর রোগীর চাপ ছিল। সবাই শ্বাসকষ্ট ও করোনা উপসর্গ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে এখানে আসতেন। আমরা নিজেরাই দেখেছি কত রোগী জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছেন। অ্যাম্বুলেন্সেই অক্সিজেন নিতে হচ্ছে এমন সিরিয়াস রোগীর সংখ্যাও অনেক ছিল। তবে ইদানীং কিছুটা কমেছে বলে মনে হচ্ছে।
আরেক রোগীর স্বজন আলতাফ হোসেন একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি করোনা রোগী ভর্তি আছেন। আমার বড় ভাই যেদিন ভর্তি হয় সেদিন জরুরি বিভাগের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সেই অক্সিজেন লাগিয়ে বসে থাকা সেই ভয়াবহ সময়ের কথা ভোলার নয়।
তিনি আরও বলেন, সে সময় অনেক সিরিয়াস করোনা রোগী এসেছেন। এখন কিছুটা কমেছে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে জরুরি বিভাগের সামনে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। কিন্তু জরুরি বিভাগে খুব একটা রোগী আসতে দেখলাম না। রোগী কম আসছে, কারণ সংক্রমণ কমেছে। আবার এটাও হতে পারে যে, এখানে সিট নেই জানতে পেরে রোগী আসা কমেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের সামনে একটি কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ভেতরে যেসব করোনা রোগী ভর্তি আছেন তাদের জন্য এই কাউন্টারে প্রয়োজনীয় জিনিস, ফলমূলসহ ওষুধ জমা দেওয়া যাচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালটির প্রধান ফটক পেরিয়ে বাম পাশে করোনা পরীক্ষা করার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। যে কেউ এখানে এসে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারছেন।
এএসএস/এইচকে/জেএস