রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে-পথেঘাটে বরইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফলের দোকানিরা। পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরন আর রঙের টক-মিষ্টি বরই।

কোনোটির রং একেবারে সবুজ, কোনোটি লালচে-সবুজ, কোনোটি আবার হলদে-সবুজ। বড় আকারের কিছু বরই এসেছে বাজারে, দেখতে খুব আকর্ষণীয়।

মৌসুমের শুরুতে বাজার চড়া থাকলেও এখন পর্যাপ্ত বরই পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম নিয়ে অভিযোগ আছে ক্রেতাদের। তারা বলছেন, মৌসুমি ফল হওয়ার পরও বরইয়ের দাম বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। 

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বাজারে ও ফুটপাতে ফলের দোকানগুলোতে নানা রঙের ছোটবড় বরই বা কল ফলের সমাহার। (দেশের অনেক অঞ্চলে বরইকে কুল নামে ডাকা হয়)

বিক্রেতারা জানান, ঢাকার বাজারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ও স্বাদের বরই রয়েছে। এর মধ্যে বারি কুল, বাউ কুল, আপেল কুল, দেশি মিষ্টি বরই, টক বরই উল্লেখযোগ্য। ভালো চাহিদা রয়েছে ব্যতিক্রমী জাত যেমন- বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, অস্ট্রেলিয়ান আপেল কুল, কাশ্মীরি কুলের। এসব বরই দেখতে সুন্দর, খেতেও বেশ মজার। মূলত, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেখানকার মাটির গুণাগুণ বিবেচনায় একেক জাতের বরই চাষ করা হয়। যার ফলে সারা দেশ থেকেই কমবেশি বরই ঢাকায় আসে।

দাম সম্পর্কে তারা বলেন, বরইয়ের আকার, মান ও বাজারভেদে দাম ওঠানামা করে। খুচরা বাজারে আপেল কুল বরই (ছোট) ১২০ টাকা, নারকেল কুল বরই ২০০ টাকা, বল কুল বরই ২০০ টাকা, টক কুল বরই ১৮০-২০০ টাকা এবং টক-মিষ্টি ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নিউমার্কেট কাঁচা বাজার সংলগ্ন একটি দোকানে বরই বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে এখন বরইয়ের অনেক বাগান হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এসব বাগানে বরই চাষ করা হয়। একটা সময় বরইয়ের মৌসুমে শুধু দেশি বরইয়ের আধিপত্য থাকলেও এখন সেটি নেই। আপেল কুল ও বাউকুল দেশি বরইয়ের চাহিদা কমিয়েছে। আপেল কুল বরইয়ের ক্রেতা বেশি আমাদের।

আকাশ নামে এক বিক্রেতা বলেন, শহরাঞ্চলে দেশি জাতের ছোট বরই বা টক বরইয়ের চাহিদা অনেক বেশি। কারণ বরই কিনে নিয়ে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে আচার তৈরি করেন। কেবল মৌসুম শুরু হয়েছে। সামনের দিনে দাম হয়ত কমে আসবে।

ক্রেতাদের বেশিরভাগই বলছেন বরইয়ের দাম বেশি। মিতুল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন বরইয়ের সিজন শুরু হয়েছে। অথচ দামে কোনো কমতি নেই। সারা দেশে এখন বাগান করে বরই চাষ করা হচ্ছে। খুচরা বাজারগুলোতে দাম কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাজারের অবস্থা ভিন্ন। আমাদের বাড়তি দাম দিয়েই বরই কিনতে হচ্ছে।

বরই ভিটামিন ও খনিজ দ্রব্যের অন্যতম উৎস বলে জানান ঢাকা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বরইয়ে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং ভিটামিন-এ ও সি রয়েছে। দেশি বরইয়ের বিভিন্ন জাতের পাশাপাশি বারি কুল-১, বারি কুল-২, বারি কুল-৩, বাউ কুল-১, বাউ কুল-২ এবং বি ইউ কুল-১, আপেল কুল ইত্যাদি কয়েকটি ভালো ও ভিটামিনযুক্ত বরইয়ের জাত।

তিনি বলেন, সাধারণত একটু গোলাকৃতির বা ডিম্বাকৃতির বরইকে কুল বলা হয়। বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝোপাকৃতির হয়ে থাকে। শীতকালে পাতা ঝরে, বসন্তে নতুন পাতা আসে। বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে গাছে ফুল আসে। ফল ধরে শীতে।

বর্তমানে অনেকে উন্নত জাতের বরই উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন বলে জানান তিনি।

আরএইচটি/জেডএস